ঘরোয়া ৫ টোটকায় শীতে ত্বক থাকবে উজ্জ্বল

আপনি কি শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে চান? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।আজকে প্রবন্ধে এমন ৫টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানাবো, যা নিয়মিত ব্যবহারে পুরো শীতেও আপনার ত্বক থাকবে ভেতর থেকে ফর্সা ও উজ্জ্বল।

শীতে-ত্বকের-উজ্জ্বলতা

শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বক বিশেষভাবে শুষ্ক, রুক্ষ ও নিস্তেজ হয়ে যায়। তাই ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে নিয়মিত যত্ন নেওয়া অপরিহার্য। সেজন্য শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ঘরোয়া উপায় এর পাশাপাশি ত্বকের ধরন অনুযায়ী সিরাম ও ক্রিম ব্যবহারে উপকার পাবেন। পোস্ট সূচিপত্র:

 শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ঘরোয়া উপায়

শীতের সময় ত্বক সাধারণত শুষ্ক, রুক্ষ এবং প্রাণহীন হয়ে যায়। এই সময় ঠাণ্ডা পরিবেশ ও কম আর্দ্রতার কারণে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কমে যায়, ফলে উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে। তাই শীতকালীন স্কিন কেয়ারে প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্ন ও দীর্ঘস্থায়ী ময়েশ্চারাইজিং। বাজারের লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করলেও ত্বক সবসময় নরম ও সতেজ থাকে না। 

শীতে-ত্বকের-উজ্জ্বলতা

এজন্য পুরো শীত জুড়ে ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে ফেস মাস্ক ত্বকে লাগালে ত্বক থাকবে আগের মত স্বাস্থ্যজ্জল। তাহলে চলুন নিচের আলোচনা থেকে দেখে নিন তিনটি কার্যকর ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার ফেস মাস্ক সম্পর্কে-

দুধ ও মধুঃ দুধে থাকে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে, আর মধু ত্বককে স্বাভাবিকভাবে ময়েশ্চারাইজ করে। ২ চা চামচ কাঁচা দুধের সঙ্গে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগান, চাইলে এখানে আপনি এক চিমটি হলুদের গুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন। মিশ্রণটি ভালোভাবে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন ব্যবহার করলে ত্বক নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। 

এলোভেরা ও নারিকেল তেলঃ অ্যালোভেরা ত্বককে ঠাণ্ডা, সান্ত্বনা ও হাইড্রেশন দেয়, আর নারকেল তেল গভীর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে। ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ১ চা চামচ নারকেল তেল ও একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে মুখে লাগান। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং শীতের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এছাড়া ত্বকের বলিরেখা দূর করতেও এই ফেসপ্যাকটি দারুন কার্যকর।

বেসন ও টক দইঃ বেসন ত্বকের ময়লা ও মৃত কোষ দূর করে, দই ত্বককে নরম করে এবং হলুদ ত্বকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা এনে দেয়। ১ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে ১ চা চামচ দই, এক চিমটি হলুদ ও আধা চা চামচ মধু মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। মুখ পরিষ্কার করে প্যাকটি লাগান এবং শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

যষ্টিমধু ও চন্দনঃ শীতে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণতা বৃদ্ধি ও ধরে রাখতে প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন যষ্টিমধু ও চন্দন ঘুরার মিশ্রণ। এক চা চামচ যষ্টিমধু ও এক চা চামচ চন্দন গুড়ো গরুর দুধের সাথে মিশিয়ে বা গোলাপ জলের সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর ত্বক নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর লাগান আপনার ত্বকের ধরনের অনুযায়ী ময়শ্চারাইজার।

টক দই, চালের গুড়া ও মধুঃ ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা করে তুলতে দারুন একটি রেমেডি টক দই চালের গুড়া ও মধুর মিশ্রণ। গোসলের আগে এক চা চামচ চালের গুড়া 2 চা চামচ টক দই ও হাফ চা চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগান। মিশ্রণটি ত্বকে শুকিয়ে আসলে রুম টেম্পারেচার পানি দিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি ত্বকের ভিতর থেকে ময়লা ও তেল সরিয়ে দিবে এবং ত্বকের মৃত কোষ দূর করবে। শীতে সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন এটি ব্যবহার করতে পারেন। মূলতঃ এই মিশ্রণটি আপনার ত্বক এক্সফোলিয়েট করবে, এর ফলে ত্বক হয়ে উঠবে ভেতর থেকে ফর্সা ও উজ্জ্বল।

শীতে ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা রাখতে ব্যয়বহুল পণ্য ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। ঘরের সহজলভ্য দুধ, মধু, অ্যালোভেরা, নারকেল তেল বা বেসনই হতে পারে আপনার প্রাকৃতিক স্কিন কেয়ার সমাধান। এভাবে শীতে ত্বকের নিয়মিত পরিচর্যা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করলে শীতেও ত্বক থাকবে উজ্জ্বল, নরম এবং স্বাস্থ্যকর।

শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সিরাম 

শীতকাল এলে ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারাতে শুরু করে এবং দেখতে নিস্তেজ ও রুক্ষ লাগে। এই সময় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলেও অনেক সময় ত্বকের ভেতর পর্যন্ত আর্দ্রতা পৌঁছায় না। তাই শীতের স্কিনকেয়ারে সিরাম যুক্ত করা খুব জরুরি। সিরাম এমন একটি স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট যা অত্যন্ত হালকা কিন্তু পুষ্টিতে ভরপুর।

শীতে সবচেয়ে কার্যকর সিরাম হলো হায়ালুরনিক অ্যাসিড সিরাম। এটি ত্বকের ভেতরে পানি ধরে রাখে এবং দিনের পুরোটা সময় ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে। যারা শীতে মুখ টান টান বা রুক্ষ অনুভব করেন, তারা হায়ালুরনিক সিরাম ব্যবহার করলে ত্বকে তৎক্ষণাত নরম অনুভূতি পাবেন।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরাম হলো ভিটামিন সি সিরাম। এটি ত্বকের ডার্ক স্পট, দাগ-ছোপ এবং সানট্যান কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ত্বককে বাইরের দূষণ থেকে রক্ষা করে।

যাদের ত্বকে দাগ, রুক্ষতা বা অসম টেক্সচার থাকে, তাদের জন্য নিয়াসিনামাইড সিরাম চমৎকার একটি অপশন। এটি ত্বকের তেল-আর্দ্রতার ভারসাম্য তৈরি করে এবং স্কিন ব্যারিয়ারকে শক্তিশালী করে। শীতে অনেকেই ত্বকে ব্রণ বা লালচেভাব অনুভব করে, নিয়াসিনামাইড সিরাম সেই সমস্যা কমাতে  এবং ত্বককে করে মসৃণ।

সিরাম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম হলো প্রথমে মুখ পরিষ্কার করুন, তারপর ২–৩ ফোঁটা সিরাম মুখে লাগিয়ে দুই হাতের চার আঙ্গুল দিয়ে ড্যাবড্যাব করে সারা মুখে লাগান, এতে সিরাম ত্বকের গভীরে পৌঁছাবে। সিরাম ব্যবহারের সময় ম্যাসাজ করার প্রয়োজন নেই। এবং শেষে ময়েশ্চারাইজার লাগান। বাসায় বা সূর্যের আলোতে গেলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। কারণ সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে আপনি যত দামি সিরাম ব্যবহার করুন না কেন কোন লাভ হবে না, বরং উল্টো ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তাই শীতে মিষ্টি রোদেও নিয়মিত ব্যবহার করুন সানস্ক্রিম।

শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখবে মশ্চারাইজার ক্রিম

শীতের আগমনে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমে যায় এবং ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক ও নিস্তেজ। এই সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় ত্বকের ওপর প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি। শুধু পানি পান করা বা সাধারণ লোশন ব্যবহার করেই শীতের শুষ্কতা দূর করা সম্ভব নয়। 

তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা ও নরমভাব ধরে রাখতে সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হচ্ছে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম। এটি ত্বকের ওপর একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি করে, যা আর্দ্রতা ধরে রাখে দীর্ঘসময়। ময়েশ্চারাইজার ক্রিমে থাকা হায়ালুরনিক অ্যাসিড, ভিটামিন E, গ্লিসারিন বা অ্যালোভেরা ত্বকের ভেতরে পানি ধরে রাখে এবং ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে।

বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে ভালো একটি ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বক সারারাত পুষ্টি পায় এবং সকালে ত্বক ফ্রেশ ও গ্লোয়িং লাগে। বাজারে অনেক রকম ক্রিম পাওয়া যায়, তবে শীতে থিক বা হেভি টেক্সচারের ক্রিম সবচেয়ে বেশি কার্যকর, কারণ এগুলো ত্বককে গভীরভাবে নরম করে।

শুষ্ক ত্বকের জন্য নারকেল তেল বা শিয়া বাটারযুক্ত ক্রিম ভালো কাজ করে, কারণ এগুলো দ্রুত শুষ্কতা দূর করে এবং ত্বককে করে মসৃণ। আবার যাদের ত্বক সেনসিটিভ বা ব্রণ প্রবণ, তারা নন-কমেডোজেনিক এবং জেল-ভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে পারেন।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার আগে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করা জরুরি। পরিষ্কার মুখে ক্রিম দিলে তা গভীরে প্রবেশ করে ত্বক দ্রুত পুষ্টি পায়। দিনের বেলা ক্রিম লাগানোর পরে সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বক সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষিত থাকে এবং ডার্ক স্পট বা ট্যান হওয়ার সম্ভাবনা কমে।

শীতে বডি বা শরীর উজ্জ্বল রাখতে যা করবেন 

শীতের সময় মুখের পাশাপাশি শরীরের ত্বকও শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। বিশেষ করে হাত, পা, কনুই ও হাঁটু দ্রুত আর্দ্রতা হারায় এবং উজ্জ্বলতা কমে যায়। শীতে ঠাণ্ডা বাতাস ও কম আর্দ্রতার কারণে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কমে যায়। তাই শুধু মুখ নয়, শরীরের ত্বকেও নিয়মিত যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমেই শরীরের ত্বক পরিষ্কার রাখা দরকার। সপ্তাহে ২–৩ দিন হালকা স্ক্রাব ব্যবহার করলে মৃত কোষ দূর হয় এবং ত্বকে উজ্জ্বলতা আসে। স্ক্রাব হিসেবে চিনি ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি নরমও থাকবে।

শরীরের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সবচেয়ে কার্যকর হলো ভালো বডি লোশন বা বডি বাটার ব্যবহার করা। শসা, গ্লিসারিন, শিয়া বাটার, নারকেল তেল বা ভিটামিন E যুক্ত লোশন দ্রুত ত্বকের ভেতরে আর্দ্রতা বাড়ায় এবং তা ধরে রাখে। গোসলের ৩ মিনিটের মধ্যে লোশন লাগানো উচিত।

প্রাকৃতিক উপায়েও শরীরের ত্বক উজ্জ্বল রাখা যায়। নারকেল তেল বা অ্যালোভেরা জেল সরাসরি লাগালে ত্বকের শুষ্কতা কমে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ে। অনেকে পায়ে, কনুই বা হাঁটুতে কালচে ভাব অনুভব করেন সেক্ষেত্রে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে সপ্তাহে কয়েকবার ম্যাসাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
 
পর্যাপ্ত পানি পান করা, ভিটামিন C সমৃদ্ধ ফল খাওয়া এবং নিয়মিত বডি কেয়ার রুটিন অনুসরণ করলে শীতে শরীরের ত্বক থাকবে উজ্জ্বল ও সতেজ। তাই শরীরের ত্বক সুন্দর ও গ্লোয়িং রাখতে প্রতিদিন বডি লোশন ব্যবহার করুন।  মনে রাখতে হবে, বাহিরের যত্নের সঙ্গে ভেতরের যত্নও গুরুত্বপূর্ণ। তাই শীতে খাদ্য তালিকায় রাখুন নানা ধরনের রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল। বিশেষ করে গাজর, টমেটো, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন।

শীতে পা ফাটা দূর করতে ঘরোয়া উপায় 

শীতের সময় বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় ত্বকের মতো পায়ের গোড়ালিও দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়। অনেক সময় অতিরিক্ত শুষ্কতার কারণে গোড়ালিতে ছোট ছোট কাটাও দেখা দেয় এবং ব্যথা হয়। শীতে পা ফাটা শুধু দেখতে খারাপ লাগে না, বরং অবহেলা করলে তা সংক্রমণ পর্যন্ত হতে পারে।

পা ফাটা দূর করতে প্রথম ধাপ হলো পায়ের ডেড স্কিন বা মৃত কোষ পরিষ্কার করা। সপ্তাহে ২–৩ দিন কুসুম গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখতে পারেন। পানিতে এক চা চামচ লবণ, একটা চামচ শ্যাম্পু ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।

মধু ও নারকেল তেল পা ফাটা দূর করতে দারুন কার্যকর। মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে যা ক্ষত সারায় এবং নারকেল তেল গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজ করে। সমপরিমাণ মধু ও নারকেল তেল মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে গোড়ালিতে লাগিয়ে মোজা পরে ঘুমান।

এছাড়া ভ্যাসেলিন ও গ্লিসারিন পদ্ধতিও খুব জনপ্রিয়। ১ চা চামচ গ্লিসারিন, ১ চা চামচ ভ্যাসেলিন এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। গোসল বা পা ভিজানোর পর যখন পা একটু নরম থাকে তখন এই মিশ্রণ লাগিয়ে নিন। এটি গোড়ালিকে গভীরভাবে হাইড্রেট করে এবং শুষ্কতা দূর করে।

শীতে পা ফাটার সমস্যায় প্রতিদিন যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। পানি কম পান করা, খালি পায়ে হাঁটা এবং অতিরিক্ত ডিটারজেন্ট ব্যবহারেও পা ফাটে। তাই প্রতিদিন পা পরিষ্কার রাখুন, গোসলের পরে পায়ে লোশন বা ময়েশ্চারাইজার লাগান এবং রাতের যত্নে নারকেল তেল বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করুন। এছাড়া বাজারে এখন ভালো মানের পা ফাটা রোধ করার ফুট ক্রিম পাওয়া যায়, প্রয়োজনেই ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

শীতে ঠোঁটের যত্নে করণীয়

শীতকালে ঠাণ্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আমাদের ত্বকের মতো ঠোঁটও আর্দ্রতা হারায়। ঠোঁটে তেলগ্রন্থি নেই, তাই ঠোঁট খুব দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং ফেটে যেতে পারে। ফলে ঠোঁটে ব্যথা, জ্বালা এমনকি রক্তও বের হতে পারে। তাই শীতকাল আসার সাথে সাথে ঠোঁটের জন্য আলাদা যত্ন নেওয়া জরুরি।

প্রথম ধাপ হলো ঠোঁটকে ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজড রাখা। নিয়মিত লিপবাম বা লিপ অয়েল ব্যবহার করলে ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় থাকে। নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, মধু বা অ্যালোভেরা জেল ঠোঁটের জন্য প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে।

ঠোঁটের মৃত কোষ দূর করা জরুরি। সপ্তাহে ২–৩ বার ঠোঁটে হালকা স্ক্রাব করলে শুষ্ক ও মৃত চামড়া উঠে যায় এবং ঠোঁট উজ্জ্বল দেখায়। চিনি ও মধু মিশিয়ে তৈরি করা স্ক্রাব আঙুল দিয়ে ধীরে ধীরে ঘষে লাগাতে পারেন। এতে ঠোঁটের কালচে ভাবও কমে এবং ঠোঁট হয়ে ওঠে মসৃণ।

ঠোঁট চাটার অভ্যাস পরিহার করুন। অনেক সময় ঠোঁট শুকিয়ে গেলে আমরা অজান্তেই ঠোঁট চাটি, কিন্তু এটি ঠিক বিপরীত ফল দেয়। লালা শুকিয়ে গেলে ঠোঁট আরও বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। এছাড়া ঠোঁটে ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করলে দিনের শেষে অবশ্যই মেকআপ রিমুভার বা তেল দিয়ে ঠোঁট পরিষ্কার করতে হবে।

শীতে ঠোঁটকে স্বাস্থ্যকর রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করাও খুব প্রয়োজন। শরীর পর্যাপ্ত হাইড্রেটেড থাকলে ঠোঁটও স্বাভাবিকভাবে আর্দ্র থাকে। ঘরোয়া যত্নের পাশাপাশি বাইরে যাওয়ার সময় SPF যুক্ত লিপবাম ব্যবহার করুন এটি সূর্যের ক্ষতি থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করে।

ফেসপ্যাক ফর গ্লোইং স্কিন করার উপায় 

গ্লোইং এবং উজ্জ্বল ত্বক পেতে সবচেয়ে সহজ উপায় হলো নিয়মিত ফেসপ্যাক ব্যবহার করা। ফেসপ্যাক ত্বকের উপর জমে থাকা মৃত কোষ দূর করে, ত্বকের গভীরে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং ত্বকে ন্যাচারাল গ্লো নিয়ে আসে। 

শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করুন ঘরোয়া ৫টি টোটকা এর মধ্যে ফেসপ্যাক ফর গ্লোইং স্কিন করার উপায় গুলো নিম্নরূপ 
  •  মুখ ভালোভাবে ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করুন।
  • টোনার ব্যবহার করলে প্রথমে টোনার লাগান। টোনার হিসেবে গোলাপজল ব্যবহার করতে পারেন।
  •  বেসন, দুধ, হলুদ, মধু ও কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন।
  • ফেসপ্যাক মুখে সমানভাবে লাগান।
  •  ১৫ মিনিট রেখে দিন, শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
  •  অ্যালোভেরা মধু ফেসপ্যাক সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
  •  শুষ্ক ত্বকের জন্য দই মধু লেবুর মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
  •  ত্বক যদি সেনসিটিভ হয় তাহলে লেবু না দিয়ে ব্যবহার করুন।
  • ফেসপ্যাক লাগানোর সময় চোখের চারপাশে এড়িয়ে চলুন।
  •  বেশি ঘষাঘষি করবেন না, ত্বক রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।
  •  ফেসপ্যাক ধোয়ার পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগান।
  •  রাতে ফেসপ্যাক করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  •  ফেসপ্যাক লাগানোর আগে বাষ্প নিলে ত্বকের পোর খুলে যায়।
  •  ফেসপ্যাক সপ্তাহে ২–৩ বারের বেশি ব্যবহার করবেন না।
  •  সূর্যের আলোতে বের হলে সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না।
  •  বেশি সময় ফেসপ্যাক মুখে রেখে দেবেন না, ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
  •  নতুন উপাদান ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করুন।
  •  পর্যাপ্ত পানি পান করুন, ত্বক ন্যাচারালভাবে উজ্জ্বল হবে।
  •  ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার খেলে ত্বকে গ্লো আসে।
  • নিয়মিত ব্যবহারই ত্বককে করে গ্লোইং এবং হেলদি।

প্রাকৃতিক স্কিন কেয়ারের নিয়ম

ত্বক আমাদের শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে রাসায়নিকযুক্ত পণ্য ব্যবহারের বদলে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা সর্বদা নিরাপদ ও উপকারী। প্রাকৃতিক স্কিন কেয়ার ত্বকের ক্ষতি করে না, বরং গভীরভাবে ত্বকের পরিচর্যা করে।

শীতে-ত্বকের-উজ্জ্বলতা

ত্বকের যত্নের প্রথম ধাপ হলো ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করা। প্রতিদিন দু’বার মুখ ধোয়া জরুরি সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমানোর আগে। প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাঁচা দুধ, বেসন, মধু বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। 

সপ্তাহে ২ দিন স্ক্রাব করা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ফলে ত্বক হয় মসৃণ ও নরম। চিনি ও মধুর মিশ্রণ, ওটস, বা কফি স্ক্রাব হিসেবে খুব কার্যকর। স্ক্রাব করার সময় খুব বেশি জোরে ঘষা উচিত নয়, এতে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নরম হাতে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেললেই ভালো ফল পাওয়া যায়।

ত্বক আর্দ্র না থাকলে রুক্ষতা, বলিরেখা ও শুষ্কতা দেখা দেয়। তাই প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজ করা খুবই জরুরি। প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অ্যালোভেরা জেল, নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল বা শসার রস ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো ত্বকের ভেতর থেকে আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং স্কিন নরম রাখে।

শুধু বাইরে থেকে যত্ন নিলেই হবে না, ভেতর থেকেও ত্বকের যত্ন নিতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান এবং সবজি, ফল, বাদাম, দই ও ভিটামিন–ই সমৃদ্ধ খাবার খেলে ত্বক স্বাভাবিক লাবণ্য ধরে রাখে। ঘুম ঠিকমত না হলে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়, তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমও জরুরি।

ঘরোয়া স্কিন কেয়ার টিপস

সুন্দর ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে প্রতিদিনের যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে অনেক স্কিন কেয়ার পণ্য পাওয়া যায়, কিন্তু সব সময় রাসায়নিকযুক্ত পণ্য ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের যত্ন নিলে ত্বক হবে স্বাস্থ্যকর, নরম এবং উজ্জ্বল।

নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখাঃ ত্বক পরিষ্কার রাখা স্কিন কেয়ারের প্রথম ধাপ। প্রতিদিন সকালে ও রাতে মুখ ধোয়া খুব জরুরি। ঘরোয়া ক্লিনজার হিসেবে কাঁচা দুধ বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যায়। এগুলো ত্বকের ময়লা, তেল ও দূষণ দূর করে এবং ত্বককে সতেজ রাখে। ঠাণ্ডা বা হালকা গরম পানি ব্যবহার করলে ত্বক আরও ভালো থাকে।

ত্বক স্ক্রাবিং করাঃ সপ্তাহে ২–৩ বার হালকা স্ক্রাবিং ত্বকের মৃত কোষ দূর করে। চিনি ও মধু মিশিয়ে তৈরি স্ক্রাব বা বেসন ও দইয়ের ফেসপ্যাক খুবই কার্যকর। স্ক্রাব খুব বেশি জোরে ঘষলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তাই আলতো হাতের চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করা উচিত। এতে ত্বক হবে নরম, মসৃণ এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।

ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহারঃ ত্বক আর্দ্র না থাকলে রুক্ষ ও ফাটা হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজ করা অত্যন্ত জরুরি। ভালো মানের যেকোনো একটি ময়শ্চারাইজার ক্রিম বেছে নিতে পারেন। এছাড়া ঘরোয়া উপাদান হিসেবে নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, অ্যালোভেরা জেল বা শসার রস ব্যবহার করে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা যায়। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান ত্বক ভেতর থেকে হাইড্রেটেড থাকে এবং দীর্ঘ সময় নরম ও সতেজ থাকে।

সানস্ক্রিম ব্যবহারঃ আপনি যদি ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করেন তাহলে সাথে ব্যবহার করতে হবে সানস্ক্রিন। আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী যে কোন ধরনের সানস্ক্রিম বেছে নিতে পারেন। বাজারে এখন ফিজিক্যাল এবং কেমিক্যাল দুই ধরনের সানস্ক্রিম পাওয়া যায়। নন কোমোডোজেনিক টিনটেড সানক্রিম সেন্সিটিভ এবং দাগ যুক্ত ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া সানস্ক্রিম বাছাই করার সময় হোয়াইট কাস্ট এভয়েড করা ভালো।

ত্বকের যত্ন শুধু বাইরে থেকে নয়, ভেতর থেকেও নেওয়া প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন সবজি, ফল, বাদাম, দই এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাদ্য ত্বককে উজ্জ্বল রাখে। শীতকালে ঠাণ্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বককে প্রাকৃতিক উপায়ে সুরক্ষা দেওয়াই সবচেয়ে ভালো।

লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠক, শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে ও বৃদ্ধি করার ৫টি ঘরোয়া টোটকা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করেছি। দেখুন, ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর। বাজারের ব্যয়বহুল ক্রিম বা কেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহার না করেও ঘরোয়া উপায়ে ত্বককে নরম, উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর রাখা সম্ভব। নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করা, স্ক্রাবিং, ময়েশ্চারাইজিং এবং পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে ত্বক ভেতর থেকে সতেজ থাকে।

শীত হোক বা গরম, সঠিক স্কিন কেয়ার অভ্যাস প্রতিদিন অনুসরণ করলে ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ও কোমলতা দীর্ঘ সময় ধরে রাখা যায়। তাই প্রাকৃতিক ও নিয়মিত যত্নকে প্রাধান্য দিন এটাই ত্বককে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখার চাবিকাঠি। যা আমরা জেনেছি আজকের এই আটিকেলে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

comment url