কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম ব্যবহার করবেন

কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম ব্যবহার করবেন এ বিষয়ে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি পড়ুন। এই আর্টিকেলে ত্বকের ধরন অনুযায়ী কোন সিরাম ব্যবহার করা ভালো হবে এ সম্পর্কে জানতে পারবেন। সাথে জানবেন, তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোন সিরাম ভালো হবে এ বিষয়ে।

কোন-ত্বকের-জন্য-কোন-সিরাম

বর্তমানে স্কিন কেয়ারে সিরাম এর ব্যবহার ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সিরামকে আমাদের ত্বকের জন্য জাদুকরী প্রোডাক্ট বলা হয়। স্কিন কেয়ারে যদি কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করে ইন্সট্যান্ট ফলাফল পেতে চান তাহলে সিরাম ব্যবহার করতে হবে। যারা নিজেদের ত্বক সম্পর্কে সচেতন তাদের স্কিন কেয়ার রুটিনে সিরাম এখন অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তবে আপনাকে আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক সিরামটি বেছে নিতে হবে। আপনি যদি না জেনে থাকেন কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম ব্যবহার করা ভালো হবে তাহলে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত জানতে পারবেন। পোস্ট সূচিপত্রঃ

তাই ধৈর্য ধরে পুরো আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।

কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম

কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম ব্যবহার করা উচিত এ সম্পর্কে এখন জেনে নিন। ব্যক্তি বিশেষে আমাদের ত্বকের ধরন আলাদা হয়। তাই ত্বকের ধরন অনুযায়ী সিরাম ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ।

সিরাম ব্যবহারে আমাদের ত্বক তারুণ্য ও লাবণ্যময় থাকে। নিয়মিত সিরাম ব্যবহার করলে আমাদের ত্বক হেলদি থাকে ও স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ধরে রাখে। এছাড়া ত্বকের যে কোন সমস্যার সমাধানেও সিরাম ম্যাজিক এর মত কাজ করে। কারণ সিরামে ব্যবহার করা হয় আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী সব শক্তিশালী ও সক্রিয় উপাদান। যা আমাদের ত্বকের ভেতরের লেয়ার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

এজন্য প্রয়োজন ত্বকের ধরন অনুযায়ী যত্নের সাথে সিরাম বেছে নেওয়া। আমরা অনেকেই কমবেশি সিরাম সম্পর্কে জানি। আবার অনেকেই বুঝতে পারেন না কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম ব্যবহার করা ভালো হবে। আর আজকের আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে জানতে পারবেন।

কারো পড়ুনঃ ৭ দিনে ফর্সা হওয়ার বাজারের সেরা ১০টি ক্রিমের নাম

শুষ্ক ত্বকের জন্য সিরাম

যাদের ত্বক শুষ্ক হয় অল্পতেই তাদের স্কিন রুক্ষ, খসখসে ও মলিন হয়ে পড়ে। এই ধরনের ত্বকে খুব দ্রুত বয়সের আগেই বলিরেখা চলে আসে। আবার রুক্ষতার জন্য ত্বকের স্বাভাবিক লাবণ্যতা হারিয়ে ফেলে।

আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয় তাহলে ব্যবহার করতে হবে হাইড্রেটিং বা মশ্চারাইজিং কোন সিরাম। এই ধরনের সিরাম শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ত্বক যখন হাইড্রেট থাকে তখন তা হেলদি এবং ভিতর থেকে প্লাম্পি দেখায়।

শুষ্ক ত্বকের জন্য কয়েকটি সিরাম এর নাম নিচে দেয়া হলঃ

  • The Bodyshop vitamin E Serum
  • White Rice rice skin beauty essence
  • Japan Sakura Serum
  • The Ordinary Hayaluronic Acid Seram
  • Melao Vitamin C serum
  • DR. RASHEL Vitamin C Serum
  • The Derma Co Snail Peptide Hydrating Serum

হাইড্রেটিং সিরাম এর মধ্যে হায়ালুরনিক এসিড সমৃদ্ধ সিরাম অন্যতম। হায়ালুরনিক এসিড এমন এক ধরনের শক্তিশালী হিউম্যাকটেন্ট যা পরিবেশ থেকে পানি টেনে এনে ত্বকে পানি ধরে রাখতে সহায়তা করে । ফলে ত্বক হাইড্রেট থাকে।

এছাড়া গ্লিসারিন, এলোভেরার মতো উপাদান সমৃদ্ধ সিরাম শুষ্ক ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই ধরনের সিরাম শুষ্ক ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখতে দারুন কাজ করে।

এছাড়া শুষ্ক ত্বকের জন্য আরেকটি কার্যকরী সিরাম হল ভিটামিন সি সিরাম। ভিটামিন সি হল এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বকে কোলাজে্ন নামক প্রোটিন এর উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে। এর ফলে ত্বক মসৃণ ও তরুণ দেখা যায়।

উপরে উল্লেখিত সিরাম গুলো শুষ্ক ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখে, ত্বক মশ্চারাইজ রাখতে কাজ করে, ত্বকের ব্যারিয়ার কে মজবুত করে ভেতর থেকে ত্বক প্লালপি করে তুলে। তাই আপনি যদি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী হন তাহলে আপনার স্কিনের জন্য এই ধরনের সিরাম বেছে নিতে পারেন।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সিরাম

যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের ব্রণ, একনি, পিম্পল যেন পিছু ছাড়ে না। মুখ থেকে অনবরত তেল নিঃসরণ হতে থাকে। এর ফলে মুখের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে তেল ময়লা জমে একনি ব্রেক আউট দেখা দেয়। ত্বক যেন মলিন হয়ে পড়ে।

আপনার স্কিনটাইপ যদি হয় তৈলাক্ত তাহলে আপনার জন্য বেস্ট সিরাম হলো নায়াসিনামাইড এবং সেলিসাইলিক এসিড সমৃদ্ধ সিরাম। অর্থাৎ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত উপাদান এই সিরাম গুলোতে ব্যবহার করা হয়।

নায়াসিনামাইড তৈলাক্ত ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমিয়ে থাকে, ফলে তৈলাক্ত ত্বকের যে প্রধান সমস্যা একনি বা পিম্পল তা থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যায়। এছাড়া এই উপাদানটি ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে এবং ত্বকের ব্যারিয়ার মজবুত করতে সহায়তা করে। এর ফলে ত্বক থাকে হেলদি, ফ্রেশ এবং গ্লোয়িং।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত আরেকটি উপাদান সেলিসাইলিক এসিড সমৃদ্ধ সিরাম। অনেক সময় তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই সিরামটি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া আপনার যদি তৈলাক্ত ত্বকের সাথে সাথে ম্যাচিউরড স্কিন হয় তাহলে ব্যবহার করতে পারেন রেটিনল। এছাড়া উজ্জ্বল ও ফর্সা ত্বকের জন্য ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহার করতে পারেন।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কয়েকটি সেরা সিরামের নাম নিচে দেওয়া হল:

  • The Ordinary Niacinamide 10%
  • The Ordinary Salisylic Acid Serum
  • Qiansoto Green Tea Serum
  • Aichun Beauty Eggs Collagen + Vitamin E Face Serum
  • Neogen Real Niacinamide 15% Serum
  • Melao Salicylic Acid 2% Solution Serum

নরমাল ত্বকের জন্য সিরাম

নরমাল ত্বকের অধিকারী যারা তারা প্রায় সব ধরনের সিরাম ব্যবহার করতে পারেন। এ ধরনের ত্বকে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে সেই মোতাবেক সিরাম বেছে নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি নরমাল ত্বক হয় এবং আপনার ত্বক যদি ডিহাইড্রেট হয়ে পড়ে তাহলে ব্যবহার করতে পারেন হায়ালুরনিক এসিড সমৃদ্ধ কোন সিরাম।

এছাড়া ব্যবহার করতে পারেন ভিটামিন ই যুক্ত সিরাপ। এই সিরাম দুটি আপনার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বক হাইড্রেট রাখবে।

এছাড়া আপনার ত্বকে যদি ডার্ক স্পট বা ম্যালেজমার মত সমস্যা থাকে তাহলে ব্যবহার করতে পারেন আলফা আরবুটিন, ভিটামিন সি বা নায়াসিনামাইড যেকোনো একটি সিরাম। এই সিরাম গুলো আপনার ত্বকের যেকোনো ধরনের দাগ দূর করার পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা করে তুলবে। ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য এই সিরাম গুলো অত্যন্ত কার্যকরী।

নিচে দেখে নিন নরমাল ত্বকের জন্য সেরা কয়েকটি সিরাম এর নাম:

  • One Spring Serum
  • DR. RASHEL Vitamin C Serum
  • Melao Whitening Seram 2% alpha arbutin ,kojic acid Serum
  • The Ordinary Hayalorunic Acid Serum
  • The Ordinary Absorbic Acid Serum
  • Melao Vitamin C Serum

কম্বিনেশন ত্বকের জন্য সিরাম

আপনার স্কিন টাইপ যদি কম্বিনেশন অর্থাৎ একই সাথে শুষ্ক এবং তৈলাক্ত হয়, তাহলে এই ধরনের ত্বকের জন্য সিরাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুটা কাস্টমাইজ করে নিতে হবে। যেমনঃ রাতে ব্যবহার করতে পারেন হায়ালুরনিক এসিড সমৃদ্ধ সিরাম বা গ্লিসারিন সমৃদ্ধ কোন সিরাম। এবং সকালে ব্যবহার করতে পারেন নায়াসিনামাইড বা সেলিসাইলিক এসিড সমৃদ্ধ সিরাম। যেমনঃ The Ordinary Niacinamide 10% Serum.

এছাড়া ত্বক হাইড্রেটিং করার জন্য বা ব্রাইটেনিং করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন ভিটামিন সি ও অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ কোন সিরাম। যেমন: The Ordinary Vitamin C Serum.

বিশেষ টিপসঃ আপনার স্কিন কম্বিনেশন কিনা তা কিভাবে বুঝবেন? এজন্য করতে হবে একটি ছোট পরীক্ষা। নরমাল পানি দিয়ে আপনার মুখ ধোয়ার পর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করবেন। ৩০ মিনিট পর আয়নার সামনে হাত দিয়ে টাচ করার পর দেখবেন কপাল, নাক এবং থুতনি তৈলাক্ত হয়েছে কিন্তু মুখের বাকি অংশ শুষ্ক। তাহলে বুঝবেন আপনার কম্বিনেশন স্কি্ন।

সংবেদনশীল ত্বকের জন্য সিরাম

আপনার ত্বক যদি সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল হয় তাহলে সিরাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অনেক সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী। কারণ সংবেদনশীল ত্বকে সব ধরনের সিরাম ব্যবহার করা যায় না। বিশেষ করে যে সিরাম গুলোতে শক্তিশালী একটিভ উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। যেমনঃ রেটিনল, হাই পার্সেন্টেজের ভিটামিন সি সিরাম, গ্লাইকোলিক এসিড সমৃদ্ধ সিরাম।

তবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য উপযুক্ত সিরাম হতে পারে নায়াসিনামাইড সমৃদ্ধ সিরাম ও ভিটামিন সি সিরাম, এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন-

  • The Ordinary Niacinamide 0.5% serum
  • Anua Niacinamide serum
  • Dr. Sheth's Cica & Ceramide Overnight Repair Serum
  • The Dernaco 4% Vitamin E Serum

নোটঃ সংবেদনশীল ত্বকের জন্য প্রয়োজনে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ বা ডারমাটোলজিস্ট এর পরামর্শে সিরাম বাছাই করা ভালো।

এন্টি এজিং সিরাম

বয়সের সাথে সাথে আমাদের ত্বক প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারিয়ে শুষ্ক হয়ে পড়ে, দেখা যায় গালের দুপাশে ভাজ, চোখের দুপাশে কুচকানো ভাব, গালের দুপাশে বলিরেখা, কপালে ইলেভেন লাইনস সহ আরো নানা সমস্যা।

এছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকে নানা ধরনের এজিং স্পট আসতে শুরু কর্বা‌ যেমনঃ বাদামী তিল, স্কিনের হঠাৎ কোন জায়গায় ছোট করে বাদামি হয়ে যাওয়া, এটাকে অবশ্য মেলাজমা বলে না, এজিং সাইনস বলা হয়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে পিগমেন্টেশন এবং হাইপার পিগমেন্টেশন এর মত সমস্যা দেখা দেয়। এসব কিছু মিলিয়ে আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং বুড়িয়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ  ৩ দিনের স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায় জেনে নিন

এই ধরনের স্কিন প্রবলেম এ যারা ভুগছেন তাদের জন্য বেস্ট সলিউশন হল এনটি এজিং সিরাম। অর্থাৎ ম্যাচিউরড স্কিনের জন্য ব্যবহার করতে হবে এন্টি এজিং কোন সিরাম। এন্টি এজিং সিরাম এর মধ্যে রয়েছে- রেটিনল যুক্ত সিরাম, পেপটাইড যুক্ত সিরাম, ভিটামিন সি যুক্ত সিরাম।

এন্টি এজিং সিরাম আপনার ত্বক থেকে সাইনস অফ এজিং অনেকটা স্লো ডাউন করবে বা ফেডআপ করতে সহায়তা করবে। সাথে ব্যবহার করতে পারেন হায়ালুরনিক এসিড যুক্ত কোন সিরাম বা ক্রিম। এই সিরামটি বয়সের কারণে হওয়া শুষ্কতা থেকে আপনার ত্বক রক্ষা করে হাইড্রেট রাখবে।

এন্টি এজিং সিরাম এর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি সিরামের নাম নিচে দেওয়া হল:

  • Minimalist Multipeptide Serum
  • The Ordinary Retinol 0.5% serum
  • Biocare Anti Freckle Whitening Facial Serum

ডার্ক স্পট/পিগমেন্টেশন কমানোর সিরাম

আপনার স্কিনে যদি পিগমেন্টেশন, হাইপার পিগমেন্টেশন, মেলাজমা এবং দাগছোপ থাকে তাহলে ব্যবহার করতে হবে স্কিনের এই বিশেষ টার্গেটকে তৈরি করা এক ধরনের সিরাম। এই ধরনের সিরাম ত্বকের দাগ দূর করে, ত্বকের উপরিভাগের লেয়ার ব্রাইট করে এবং পিগমেন্টেশন লাইট বা হালকা করতে কাজ করে।

এছাড়া দাগ এবং পিগমেন্টেশন দূর করার পাশাপাশি আপনার স্কিনকে হেলদি এবং প্লাম্পি করে তুলবে। এই ধরনের সিরামের মধ্যে রয়েছে- আলফা আরবুটিন সিরাম, কোজিক অ্যাসিড যুক্ত সিরাম, ভিটামিন সি সিরাম, গ্লাইকোলিক এসিডযুক্ত সিরাম।

ডার্ক স্পট ও পিগমেন্টেশন কমানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন-

  • Care Nel Anti-Melasma Cica Intensive Serum
  • The Ordinary Absorbic Acid 10% Serum
  • The Ordinary Niacinamide 10% Serum
  • Novoclear Advanced Dark spot Correcting Serum
  • Axis Y Dark Spot Correcting Serum

স্কিন ব্যারিয়ার রিপেয়ার সিরাম

আপনার স্কিন ব্যারিয়ার যদি ক্ষতিগ্রস্ত থাকে তাহলে ব্যবহার করতে হবে এক ধরনের সিরাম যেগুলোর কাজ হল ত্বকের ব্যারিয়ারটাকে মজবুত করা। এই ক্যাটাগরির উপাদানের মধ্যে রয়েছে- সিরামাইডস সমৃদ্ধ সিরাম, কোরিয়ান স্নেল মিউকিন এসেন্স বা সিরাম গুলো।

এই উপাদান যুক্ত সিরাম ত্বকের ব্যারিয়ার রিপেয়ার করে মজবুত করে তোলে এবং ধীরে ধীরে ত্বক হেলদি করে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়া সিরামাইডস উপাদানটি বাম্পি ত্বকেও বিশেষ উপকারী।আমাদের ত্বকে যে ছোট ছোট দানার মত হয় সেটাই বাম্প নামে পরিচিত। বাম্প যুক্ত ত্বক কোমল ও মসৃণ করতে সিরামাইড উপকারী একটি উপাদান।

স্কিন স্কিন ব্যারিয়ার রিপেয়ার করার কয়েকটি সেরা সিরাম এর নাম নিচে দেয়া হলোঃ

  • Cerave Hydrating Hyaluronic Acid Serum
  • Nykaa Skin RX2% Ceramide Complex Serum
  • Dr. Shet's Cica Ceramide Overnight Repair Serum

কোন-ত্বকের-জন্য-কোন-সিরাম

সিরাম কি

সিরাম হল ছোট ছোট মলিকিউল দিয়ে তৈরি একটি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। সিরাম মূলতঃ একটি হাইলি ইফেক্টিভ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। সিরাম স্কিন টাইপ ও স্কিন কনসার্ন অনুযায়ী তৈরি করা হয়। প্রতিটি সিরামে আলাদা আলাদা শক্তিশালী ও সক্রিয় উপাদান ব্যবহার করা হয়। যা স্কিনের নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করার জন্য কাজ করে।

সিরামের উপাদানগুলো সহজেই আমাদের ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে, যা অন্যান্য স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট পারে না। যেমনঃ হাইড্রেটিং সিরাম সহজে আমাদের ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে ত্বক ভেতর থেকে হাইড্রেট করে তোলে। তেমনি ডার্ক স্পট কমানোর সিরাম গুলো ত্বকের গভীরে ঢুকে সরাসরি কাজ করে ভেতর থেকে ডার্ক স্পট কমাতে সাহায্য করে।

মোটকথা, সিরামের নিউট্রিয়েন্টস ক্ষমতা অন্যান্য স্কিন কেয়ার পণ্যের চেয়ে অনেক বেশি।

সিরামের কনস্টেন্সি অনেকটা পানির মত। পানি যেমন কোন স্পঞ্জ এর ভিতরে সহজে চলে যেতে পারে তেমনি সিরামও আমাদের ত্বকের ভেতরের লেয়ার পর্যন্ত পৌঁছে কাজ করতে পারে। এজন্য ত্বকের নির্দিষ্ট প্রবলেম অনুযায়ী সিরাম ব্যবহার করলে দ্রুত ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোন সিরাম ভালো

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোন সিরাম ভালো হবে এ বিষয়ে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটি পড়ুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুব সাবধানতার সাথে সিরাম বাছাই করতে হবে। সব ধরনের সিরাম তৈলাক্ত ত্বকে ব্যবহার করলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে।

তৈলাক্ত ত্বকে যেহেতু তেল নিঃসরণ হতে থাকে এবং গরমকালে এই তেল নিঃসরণে মাত্রা বেশি হয়। যার ফলে যারা তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী তারা নানা ধরনের সমস্যায় ভোগেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো একনি ও পিম্পল ওঠা, ত্বক কালচে ও নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া।

তাই এমন উপাদান যুক্ত সিরাম বাছাই করতে হবে যা ত্বক থেকে তেল নিঃসরণ কমিয়ে আনতে পারবে। সাথে ত্বকের ছিদ্রগুলো হতে অতিরিক্ত তেল ও ময়লা পরিষ্কার করতে পারবে। এই ধরনের একটি সিরাম হলো- নায়াসিনামাইড সিরাম। 

ত্বক বিশেষজ্ঞের মতে, ওয়েলি স্কিনে নিয়মিত নায়াসিনামাইড সিরাম ব্যবহারে তেল নিঃসরণ অনেকটাই কমিয়ে ত্বক ব্রণ মুক্ত ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। এজন্য অনেক ডার্মাটোলজিস্ট তৈলাক্ত ত্বকের জন্য  নায়াসিনামাইড ১০% ও জিংক ২% সমৃদ্ধ সিরাম ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আরেকটি উপযোগী সিরাম হলো সেলিসাইলিক এসিড সমৃদ্ধ সিরাম। সেলিসাইলিক এসিড মূলতঃ BHA ( Beta Hydrxy Acid), এই উপাদানটি ত্বকের খোলা ছিদ্র গুলোর ভিতরে প্রবেশ করে এক্সফোলিয়েট করে, এর ফলে ত্বকের খোলা ছিদ্রের আকার অনেকটাই ছোট করে তুলতে সহায়তা করে। ফলে ত্বক অনেকটাই ফ্রেশ দেখায়।

এছাড়া তৈলাক্ত ত্বকের সিরাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় নজর দেওয়া জরুরি, তা হলো ওয়াটার বেস সিরাম ব্যবহার না করে জেল বেস সিরাম ব্যবহার করা ভালো। যেমনঃ The Ordinary Niacinamide 10% serum. এছাড়া ব্যবহার করতে পারেন রেটিনলযুক্ত কোন সিরাম। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই উপাদানটিও কার্যকরী।

নিচে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী কয়েকটি সিরামের নাম দেয়া হলোঃ

  • The Ordinary Niacinamide 10% serum
  • Anua Niacinamide Serum 10%
  • La Rochy-Posay Retinol b3 serum
  • The Ordinary Absorbic Acid & Alpha Arbutin Serum
  • The Ordinary Retinol 0.5% Serum
  • The Ordinary Salicylic Acid 2%Serum
  • MamaEarth Vitamin C Glow Serum
  • BioCare Acne, Oil, & Pores Minimizing Serum

তাই আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় আশা করি আর্টিকেলের পয়েন্টটি পড়ে আপনার ত্বকের জন্য সঠিক সিরামটি বাছাই করতে পারবেন।

ছেলেদের জন্য কোন সিরাম ভালো

মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের ত্বকের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত ছেলেদের ত্বক মেয়েদের ত্বকের চেয়ে ২০% মোটা বা পুরু হয়ে থাকে। বাইরে থাকার কারণে ছেলেদের ত্বকে বেশি কালো দাগ হতে দেখা যায় বা স্কিন কালো হয়ে যায়।

আবার ছেলেদের ত্বক তৈলাক্ত হয় বেশি, ফলে দেখা দেয় ব্রণ সহ নানা ধরনের সমস্যা। এজন্য ছেলেদের ত্বকেও যত্ন নেওয়া আরো বেশি জরুরী। না হলে একনি পিম্পল বৃদ্ধি পাবে, ত্বকের কালো দাগ গভীরে পৌঁছে চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।

এজন্য ছেলেদের ত্বকে ক্রিম ব্যবহারের পাশাপাশি ত্বকের উপযোগী কোন সিরাম ব্যবহার করলে ত্বক ভালো থাকবে।

ছেলেদের ত্বকের ধরন অনুযায়ী যে সকল সিরাম ব্যবহার করতে পারেন তা নিচে দেখে নিন।

  • আপনি যদি আপনার স্ক্রিনটন ব্রাইট বা উজ্জ্বল করে তুলতে চান তাহলে ব্যবহার করতে পারেন ভিটামিন সি, নায়াসিনামাইড এবং রেটিনল যুক্ত সিরাম।
  • আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় এবং আপনি ব্রণের সমস্যায় ভুগেন তাহলে নায়াসিনামাইড ও সেলিসাইলিক এসিডযুক্ত সিরাম ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
  • আপনার ত্বকে যদি বলি রেখা দেখা দেয়, কুচকানো ভাব, রিংকেল ফাইল লাইনস এর মত সমস্যা থাকে তাহলে ব্যবহার করতে পারেন রেটিনল এবং পেপটাইড যুক্ত সিরাম।
  • আপনার ত্বকে যদি ডার্ক স্পট, পিগমেন্টেশন বা হাইপার পিগমেন্টেশন থাকে তাহলে ব্যবহার করতে পারেন ভিটামিন সি, আলফা আরবুটিন সমৃদ্ধ সিরাম।
  • আপনি যদি শুষ্ক ত্বকের মতো কোনো সমস্যায় ভুগেন তাহলে ব্যবহার করতে পারেন হায়ালুরনিক এসিড ও গ্লিসারিন সমৃদ্ধ কোন সিরাম।

মেছতার জন্য কোন সিরাম ভালো

আমাদের ত্বকে প্রায়ই নানা কারণে মেছতার মত সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় এটা জেনেটিক কারনে হতে পারে তেমনি ঠিকমতো ত্বকের যত্ন না লেখ নেওয়ার কারণেও হতে পারে। আবার দীর্ঘ সময় সানস্ক্রিম ছাড়া রোদে থাকলে এই ধরনের সমস্যা বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে আমাদের মত গ্রীষ্মমন্ডলীয় উষ্ণ দেশে এই সমস্যা অনেক বেশি।

যাদের ত্বকে মেছতা রয়েছে বা মেস্তা পড়া শুরু করেছে তারা এই মেছতা নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ও সিরামের খোঁজ করেন। মেছতা এমন একটি স্কিন সমস্যা যা কোন ক্রিম ব্যবহারে দূর করা সম্ভব নয়। যেহেতু ক্রিম আমাদের ত্বকের উপরের লেয়ার থেকে ভিতরে লেয়ারে যেতে পারে না।

তবে কিছু কিছু সিরাম ত্বকের মেছতা ভালো করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু উপাদান ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এই ধরনের সিরাম ত্বকের ভেতরে লেয়ার পর্যন্ত পৌঁছে মেছতা নিরাময় অনেকটাই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় নিয়মিত ব্যবহারে মেছতা ফেড হয়ে যায় বা লাইট হয়ে যায় যা অনেক সময় খালি চোখে দেখা যায় না।

আপনাদের সুবিধার্থে মেছতার জন্য ভালো কয়েকটি সিরাম এর নাম নিচে দেওয়া হলঃ

  • The Ordinary Ascorboc Acid & Alpha Arbutin Serum
  •  The Axis-Y Dark spot Correcting Glow serum
  • The Ordinary Vitamin C serum
  • The Ordinary Retinol serum
  • The Ordinary Alpha Arbutin Serum
  • Care Nel Anti-Melasma Cica Intensive Serum

উজ্জ্বল ত্বকের জন্য সেরা সিরাম

আপনি যদি আপনার ত্বক উজ্জ্বল করতে চান তাহলে ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন ধরনের ব্রাইটেনিং সিরাম। সাধারণত এই ধরনের সিরাম ত্বকে ট্যান পরা, ত্বক কালচে হয়ে যাওয়া, ত্বকের অসমতা অর্থাৎ কোথাও ফর্সা কোথাও কালো ভাব দূর করা, ত্বকের দাগ দূর করার জন্য ব্রাইটেনিং সিরাম ব্যবহার করা হয়।

ব্রাইটেনিং সিরাম এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরাম হল- ভিটামিন সি সিরাম ও নায়াসিনামাইড সিরাম।

ভিটামিন সি সিরাম আমাদের ত্বকের মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে নতুন কোষ গজাতে সহায়তা করে। এছাড়া আমাদের ত্বকের মৃতকোষ সরিয়ে সরিয়ে নতুন কোষের এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত করে ভিটামিন সি। এর ফলে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা দেখায়। এছাড়া ভিটামিন সি সিরাম ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বক তরুন ও টানটান রাখতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুনঃ কালো থেকে ফর্সা হওয়ার দ্রুত ৬টি ঘরোয়া উপায়

সূর্যের আলোর UV রশ্মি, অক্সিডেসিভ স্ট্রেস, পরিবেশ দূষণের কারণে ত্বকের ক্ষতি থেকে আমাদের স্কিন রক্ষা করতেও দারুন কাজ করে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি দিনে রাতে যেকোনো সময় ব্যবহার করা যায়।সকালে বা দিনের বেলায়  সিরাম ব্যবহারের পর ভালো এসপিএফ যুক্ত কোন sancream ব্যবহার করতে হবে।

নায়াসিনামাইড আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এমনকি এই উপাদানটি ত্বকের দাগ দূর করতেও দারুণ কার্যকরী। বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বক যাদের তাদের ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয় নায়াসিনামাইড সিরাম।

এছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতে পারেন রেটিনল, অ্যাজেলিক অ্যাাসিড যুক্ত সিরাম।

নিচে আপনাদের জন্য সেরা কয়েকটি ত্বক উজ্জ্বল করার এর সিরামের তালিকা দেয়া হলোঃ
  • The Ordinary Vitamin C serum
  • MamaEarth skin Elumating Face Serum
  • Lilac Vitamin C serum
  • Boots Glow Essence Serum
  • Biocare Anti Freckle Whitening Face Serum
  • Ole Henriksen Truth Serum
  • Organikaon Vitamin C Serum

ব্রনের জন্য কোন সিরাম ভালো

আপনার ত্বকে যদি একনি বা ব্রণের সমস্যা থাকে তাহলে বেছে নিতে হবে স্কিনের এই ধরনের টার্গেট কে তৈরি করা বিশেষ এক ধরনের সিরাম। সাধারণত অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বক যাদের তাদের এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। অনেক সময় এই ধরনের ত্বকে একনি ব্রেক আউট হতে পারে।

এই একনি প্রন স্কিনের জন্য এমন কিছু উপাদান যুক্ত সিরাম বেছে নিতে হবে যা অতিরিক্ত যা অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ স্বাভাবিক করবে এবং আমাদের ত্বকের ক্ষুদ্র ছিদ্রগুলো হতে তেল- ময়লা, জীবাণু বের করে আনতে পারবে।

তাই ব্রণের জন্য নায়াসিনেমাইড, সেলিসাইলিক এসিড সমৃদ্ধ সিরাম ব্যবহার করা ভালো হবে। এছাড়া ব্রণের জন্য টি ট্রি ওয়েল যুক্ত সিরাম বেছে নিতে পারেন।

শুষ্ক ত্বকের জন্য কোন সিরাম ভালো

ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে, ত্বকে পানির পরিমাণ কমে গেলে ফাইন লাইনস, কুঁচকানো ভাব ও বলিরেখার মতো সমস্যা দেখা দেয়। ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ দেখা যায়। ত্বকের এই শুষ্কতা থেকে রক্ষা করতে ত্বকে পানির পরিমাণ ধরে রাখতে ও পানির পরিমাণ বাড়াতে হাইড্রেটিং যুক্ত সিরাম ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের সিরাম ব্যবহারে ত্বক ভেতর থেকে আর্দ্র থাকে।

তাই আপনার যদি এই ধরনের স্কিন প্রবলেম থাকে, তাহলে ত্বকের আদ্রতা বজায় রেখে শুষ্কতা থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহার করতে পারেন হায়ালুরনিক, সেন্টেলা এশিয়াটিকা, সিকা যুক্ত সিরাম। এই উপাদান যুক্ত সিরাম গুলো শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযুক্ত সিরাম।

সিরাম ব্যবহারের নিয়ম ও সতর্কতা

কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম ব্যবহার করা ভালো এই সম্পর্কে আমরা উপরে জেনেছি। এখন জানব আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সিরাম ব্যবহারের নিয়ম ও যে সকল সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী এ বিষয়ে। অর্থাৎ সিরাম ব্যবহার শুরু করার আগে যে সকল বিষয় জানা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুনঃ কালো মেয়ে ফর্সা হওয়ার (কোরিয়ান) বেস্ট ১০টি ক্রিম

দেখুন, আমরা সিরাম ব্যবহার করি ত্বকের কোন একটি সমস্যার সমাধানের জন্য। আর মুখে সিরাম তখনই বেস্ট রেজাল্ট দিবে যখন আপনি যথাযথ নিয়ম মেনে তা ব্যবহার করবেন।

এছাড়া সিরাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মানতে হবে, সিরামের কার্যকারিতা ধরে রাখার জন্য।

তাহলে চলুন এখন জেনে নেই সিরাম ব্যবহারের নিয়ম ও যে সকল সতর্কতা জানতে হবে এ বিষয়েঃ

মুখ পরিষ্কার করুনঃ সিরাম ব্যবহারের আগে অবশ্যই মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। আপনি যদি রাতে সিরাম ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই আপনার মুখ ডাবল ক্লিনজিং করতে হবে। যাতে আপনার মুখে জমে থাকা তেল-ময়লা ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়ে আসে।

দিনের বেলায় অর্থাৎ সকালে আপনি যদি সিরাম ব্যবহার করেন তবুও আপনার মুখ খুব ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে, মুছে তারপর ব্যবহার করতে হবে। মোট কথা, সিরাম সবসময় পরিষ্কার ত্বকে ব্যবহার করা উচিৎ।

ভেজা ত্বকে সিরাম লাগানঃ মুখ পরিষ্কার করার পর সব সময় চেষ্টা করবেন ভেজা ত্বকে সিরাম লাগানোর। অর্থাৎ মুখ একেবারে শুকনো করে সিরাম লাগাবেন না। এতে সিরাম ভালোভাবে কাজ করতে পারবে না। যেমনঃ হাইড্রেটিং সিরাম, হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সিরাম ভেজা ত্বকে ব্যবহার করলে এর কার্যকারিতা ১০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

তবে কিছু কিছু সিরাম এর ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমা রয়েছে, যেমনঃ আপনি যদি রেটিনল, ভিটামিন সি, কেমিক্যাল এক্সফলিউশন সিরাম ব্যবহার করেন তাহলে মুখ ধোয়ার পর শুকনো করে তারপর ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ ভেজা তোকে এই সিরাম গুলো ব্যবহার করা যাবে না।

ময়শ্চারাইজার লাগানঃ সিরাম ব্যবহারের পর যত দ্রুত সম্ভব আপনার ত্বকে ময়শ্চারাইজার লাগান। এতে সিরাম আপনার ত্বকে সিল হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে আপনি যদি দিনের বেলায় কোন সিরাম ব্যবহার করেন তাহলে ভালো মানের একটি সানস্ক্রিম এপ্লাই করুন।

আর রাতে সিরাম ব্যবহার করার পর ২ থেকে ৩ মিনিট পর অবশ্যই কোন মশ্চারাইজার লাগান।

ব্যবহারের নিয়মঃ সিরাম সাধারণত বিভিন্ন ধরনের বোতলে এসে থাকে। যেমনঃ অনেক সিরাম আছে পামপ বোতলে আসে আবার অনেক সিরাম ড্রপ দিয়ে ব্যবহার করতে হয়। তবে সিরাম যে বোতলে থাকুক না কেন, কোনভাবেই যেন পাম্পের জায়গাটি বা ড্রপারর্টি স্কিনের সঙ্গে না লাগে।

এতে আপনার মুখ থেকে জীবাণু বা ভাইরাস ড্রপারের মুখ থেকে ভেতরে প্রবেশ করে সিরামের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে।

কিভাবে ব্যবহার করবেনঃ সিরাম মুখে লাগানোর পর মুখের মধ্যে ঘষাঘষি বা ম্যাসাজ না করে সারা মুখে ট্যাপ ট্যাপ করে হালকা হাতে লাগিয়ে নিন। এতে সিরাম ত্বকে ভালোভাবে শোষণ হতে পারবে।

কোন সিরামের সাথে কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যাবেঃ আমরা অনেক সময় আমাদের ত্বকের দ্রুত রেজাল্ট পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের সিরাম এবং ক্রিম একসাথে ব্যবহার করি। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, কিছু কিছু সিরাম এর সাথে সক্রিয় উপাদান যুক্ত অন্য আরেকটি প্রোডাক্ট কোনভাবেই ব্যবহার করা যাবে না।

যেমনঃ রেটিনল ও ভিটামিন সি এর সাথে AHA  ও BHA যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যাবে না।

সঠিক পারসেন্টেন্স এ শুরু করাঃ সিরাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনি যদি বিগিনার হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কম পার্সেন্টেজ দিয়ে সিরাম ব্যবহার করা শুরু করতে হবে। যেমনঃ 0.2 থেকে 0.5 দিয়ে শুরু করা ভালো। সিরাম যেহেতু শক্তিশালী সক্রিয় উপাদান দিয়ে তৈরি তাই হঠাৎ করে বেশি পার্সেন্টেজ দিয়ে সিরাম ব্যবহার শুরু করলে তা ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

কনসিসটেন্সি ধরে রাখাঃ সিরাম ব্যবহার থেকে যথাযথ উপকার পেতে হলে এর কন্সিস্টেন্সি ধরে রাখতে হবে। নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট সময়ে সিরাম ব্যবহার করুন এবং সিরাম থেকে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পান।

সিরামের এক্সপায়ার ডেট এবং সেলফ লাইফঃ প্রতিটি সিরাম ব্যবহার শুরু করার আগে এর এক্সপায়ার ডেট এবং সেলফ লাইফ ভালোভাবে জেনে রাখুন। এক্সপায়ার ডেট হলো সিরামটি তৈরি করার পর কত বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। সাধারণত যে কোন সিরাম তৈরির পর থেকে ১ থেকে ২ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করার এক্সপায়ারি ডেট থাকে।

আর সেলফ লাইফ হলো আপনি সিরাম ওপেন করার পর কতদিন পর্যন্ত তা কার্যকারিতা থাকবে। অর্থাৎ সিরাম ওপেন করার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১২ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা ভালো। কারন এই সময় পর্যন্ত সিরামের একটিভ উপাদান গুলো কার্যকারিতা ধরে রাখে।

প্রতিটি সিরামের বোতলের গায়ে একটু খেয়াল করলেই সেলফ লাইফ সংখ্যাটি দেখতে পাবেন।

সিরাম রাখার জায়গাঃ আপনার ব্যবহার করা সিরামটি আপনি কোথায় রাখছেন এর উপর আপনাকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সিরাম কখনোই ফ্রিজ এর মত ঠান্ডা জায়গায় এবং আবার গরম কোন জায়গায় রাখা যাবে না। মোটকথা রুম টেম্পারেচারে সিরাম রাখতে হবে। এতে সিরামের কার্যকারিতা বজায় থাকবে।

কোন-ত্বকের-জন্য-কোন-সিরাম

সিরাম কেনার সময় সাবধানতা

কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম ব্যবহার করা ভালো এ বিষয়ে জানার পর সিরাম কেনার সময় আপনাদের কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারন বর্তমানে বাজারে নানা ধরনের প্রচুর সিরাম রয়েছে, তাই কোন সিরামটি আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত এ বিষয়টি জানা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ আপনি যে সিরামটি কিনছেন সেটি আসলেই অথেনটিক বা অরিজিনাল কিনা।

এজন্য সিরাম কেনার সময় নিম্নলিখিত বিষয় গুলোর দিকে নজর দিতে পারেনঃ

  • বাজারে বা মার্কেটে প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্র্যান্ড থেকে সিরাম কেনার চেষ্টা করুন
  • যে সিরামটি কিন্তু চাচ্ছেন সেই সিরামের রিভিউ করে নিতে পারেন।
  • সিরামের বোতলের গায়ে উপাদান গুলো ভালোভাবে পড়ে নিন।
  • সিরামটি ক্লিনিক্যালি প্রুভেন বা ত্বক চিকিৎসকগণ সিরামটি রেকমেন্ড করেছেন কিনা এই সকল বিষয় ভালোভাবে চেক করে নিবেন।
  • সবচেয়ে জরুরী যে বিষয়, বাংলাদেশের ট্রাস্টেড কোন শপ বা পেজ থেকে সিরাম কেনার চেষ্টা করবেন, যাতে ফেক প্রোডাক্ট থেকে দূরে থাকতে পারেন।
  • যে কোন সিরাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার জন্য সিরামের নামটি গুগলের লিখে সার্চ দিয়ে পড়তে পারেন। এখানে আপনারা সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন।

সিরাম ব্যবহারের অপকারিতা

সিরাম আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি প্রোডাক্ট। স্কিনের ধরন বুঝে, স্কিনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সিরাম ব্যবহার করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। তেমনি না বুঝে সিরাম ব্যবহার করলে তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব বয়ে আনতে পারে। এজন্য সিরাম ব্যবহারে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।

সিরাম ব্যবহারের ফলে যে সকল অপকারিতা হতে পারে তা এক নজরে দেখে নিনঃ
  • সিরাম ব্যবহারে অনেকের ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি ও র‍্যাশ উঠার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে বেশি পরিমাণে সিরাম ব্যবহার করলে, যেহেতু সিরাম শক্তিশালী সক্রিয় উপাদানে তৈরি।
  • কিছু কিছু একটিভ উপাদান যুক্ত সিরাম ব্যবহারের পর সানস্ক্রিম ব্যবহার না করলে ত্বক জ্বালাপোড়া সহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • সিরাম ব্যবহারের শুরুতে লো পারসেন্টেন্স দিয়ে ব্যবহার না শুরু করে একেবারে বেশি পার্সেন্টেজ এর সিরাম ব্যবহারে ত্বক অতি সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারে।
  • ত্বকের নির্দিষ্ট কোন সমস্যা সমাধানে স্পেসিফিক উপাদান বিশিষ্ট সিরাম ব্যবহার না করে অন্য কোন সিরাম ব্যবহার করলে অনেক সময় তা ত্বকে নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
  • বিভিন্ন একটিভ উপাদান যুক্ত সিরাম একসাথে ব্যবহার করলে ত্বকের ব্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ত্বক ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।
  • নির্দিষ্ট বয়সের আগে সিরাম ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠক, কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম ব্যবহার করবেন এ বিষয়ে আজকে আর্টিকেলে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। সিরাম সক্রিয় উপাদান যুক্ত একটি শক্তিশালী স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। সিরাম ব্যবহারে আমরা আমাদের ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি।

এছাড়া তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোন সিরাম ভালো এ বিষয়ে আপনারা জানতে পেরেছেন। জেনেছেন ছেলেদের জন্য কোন সিরাম ভালো, উজ্জ্বল ত্বকের জন্য কোন সিরাম ভালো হবে সহ আরো অন্যান্য বিষয়ে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকার হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

comment url