ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা - ইউরোপের নন সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা ২০২৫

 ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল থেকে জেনে নিন। আরো জানবেন, ইউরোপের নন সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা ২০২৫ সম্পর্কে।

ইউরোপের-সেনজেনভুক্ত-দেশের-তালিকা

সেনজেনভুক্ত দেশসমূহ ইউরোপের একটি বিশেষ গোষ্ঠীভুক্ত দেশ, যারা পারস্পরিক ভিসামুক্ত যাতায়াতের সুবিধা দিয়ে থাকে। সেনজেন চুক্তি ১৯৮৫ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বাতিল করা হয়, যাতে মানুষ ও পণ্য অবাধে চলাচল করতে পারে।

বর্তমানে সেনজেন অঞ্চলে ২০টিরও বেশি দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হলেও কিছু দেশ সেনজেন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত থাকলেও ইইউ-এর সদস্য নয়। এই অঞ্চল ইউরোপের অভ্যন্তরে পর্যটন, বাণিজ্য এবং সামাজিক মেলবন্ধনকে সহজতর করেছে। পোস্ট সূচিপত্রঃ

ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা 

ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো একটি ভিসামুক্ত অঞ্চল, যেখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো পারস্পরিক সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ প্রায় উঠিয়ে দিয়েছে। এই অঞ্চলের মূল উদ্দেশ্য হলো ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে নাগরিকদের অবাধ যাতায়াত, পণ্য পরিবহন, ও পারস্পরিক সহযোগিতা সহজতর করা।

সেনজেন চুক্তির মাধ্যমে এই দেশগুলো একটি অভিন্ন সীমান্ত গঠন করেছে, ফলে যেকোনো একটি সেনজেন দেশের ভিসা পেলে অন্যান্য সদস্য দেশগুলোতেও অবাধে যাতায়াত করা যায়। তাই যে কোন কাজের উদ্দেশ্যে সেনজেনভুক্ত একটি দেশের ভিসা পেলে অন্য দেশেও সহজে যাওয়া যায়। ভ্রমণকারীরাও এই সুবিধাটি ভোগ করে থাকেন।

বর্তমানে ২০টির বেশি দেশ এই চুক্তির আওতাভুক্ত, এবং সময়ের সাথে সাথে কিছু দেশ নতুন করে যুক্ত হয়েছে। যারা ইউরোপে যাওয়ার চিন্তা করছেন তারা সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর এই তালিকা জানতে চান। এছাড়া বিশেষ করে যারা একাধিক ইউরোপীয় দেশ ঘুরতে চান, তাদের জন্য সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা জানা জরুরী।

নিচে দেখে নিন সেনজেনভুক্ত ইউরোপীয় দেশের তালিকা (২০২৫ অনুযায়ী):
  • অস্ট্রিয়াঃ অস্ট্রিয়া মধ্য ইউরোপের স্থল বেষ্টিত একটি দেশ। এই দেশটি পূর্ব আল্পস পর্বতমালায় অবস্থিত। অস্ট্রিয়ার আনুষ্ঠানিক নাম অস্ট্রিয়া প্রজাতন্ত্র। দেশটির অফিসিয়াল ভাবে জার্মান ভাষা প্রচলিত। অস্ট্রিয়ার রাজধানীর নাম ভিয়েনা। দেশটিতে অভিন্ন ইউরো মুদ্রা প্রচলিত।

  • বেলজিয়ামঃ বেলজিয়াম উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের একটি ছোট ও ঘনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্র। দেশটির রাজধানীর নাম ব্রাসেলস। দেশটিতে বর্তমানে তিনটি অফিসিয়াল ভাষা রয়েছে, জার্মান, ডাচ ও ফ্রেঞ্চ। বর্তমানে দেশটিতে ইউরো মুদ্রা প্রচলিত।

  • চেক প্রজাতন্ত্রঃ মধ্য ইউরোপের একটি উন্নত অগ্রসরশীল দেশ হলো চেক প্রজাতন্ত্র। দেশটিতে বর্তমানে একক সংসদীয় গণতন্ত্র বহাল রয়েছে। ইউরোপের অন্যতম শিক্ষা সামাজিকভাবে উন্নত একটি দেশ চেক প্রজাতন্ত্র। দেশটি রাজধানীর নাম প্রেগ। বর্তমানে দেশটিতে কোরুনা( চেক ক্রাউন) মুদ্রা প্রচলিত। দেশটির অফিসিয়াল ভাষা চেক।

  • ডেনমার্কঃ সেনজেনভুক্ত উত্তর পশ্চিম ইউরোপের আরেকটি ছোট সুন্দর ধনী রাষ্ট্র ডেনমার্ক। দেশটি রাজধানীর নাম কোপেনহেগ। বর্তমানে দেশটিতে ড্যানিশ মুদ্রা প্রচলিত।

  • এস্তোনিয়াঃ সেনজেনভুক্ত উত্তর ইউরোপের বালটিক সাগরের তীরে অবস্থিত ছোট রাষ্ট্র এস্তোনিয়া। অফিসিয়ালি দেশটির নাম এস্তোনিয়া প্রজাতন্ত্র। দেশটির রাজধানীর নাম তালিন। দেশটির সরকারি ভাষা এস্তনিও এবং মুদ্রার নাম ইউরো।

  • ফিনল্যান্ডঃ সেনজেন ভুক্ত উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের বালটিক সাগরের উপকূলে অবস্থিত দেশ ফিনল্যান্ড। দেশটির রাজধানীর নাম হেলসিংকি। সরকারিভাবে ফিনিশ এবং সুইডিশ ভাষা প্রচলিত। মুদ্রার নাম ইউরো।

  • ফ্রান্সঃ সেনজেনভুক্ত পশ্চিম ইউরোপের একটি উন্নত দেশ ফ্রান্স। দেশটির রাজধানীর নাম প্যারিস। ফ্রান্স ফ্যাশন, সংস্কৃতির, খাবার এর জন্য বিখ্যাত। এখানে বিশ্ব বিখ্যাত লুভের মিউজিয়াম এবং আইফেল টাওয়ার অবস্থিত। দেশটির মুদ্রার নাম ইউরো। সরকারি ভাবে ফ্রেন্স ভাষা প্রচলিত।
  • জার্মানিঃ সেনজেন ভুক্ত মধ্য ইউরোপের উন্নত দেশ জার্মানি। দেশটি বালটিক সাগর ও উত্তর সাগরের মধ্যবর্তীতে অবস্থিত। দেশটির দক্ষিণে আল্পস পর্বতমালা। রাজধানীর নাম বার্লিন। সরকারিভাবে জার্মান ভাষা প্রচলিত এবং মুদ্রার নাম ইউরো।

  • গ্রিসঃ ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের আরেকটি সেনজেনভুক্ত ধনী দেশ গ্রিস। দেশটির রাজধানীর নাম এথেন্স এবং সরকারিভাবে গ্রিক ভাষা প্রচলিত। মুদ্রার নাম ইউরো। দেশটির সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্রবিন্দু।

  • হাঙ্গেরিঃ মধ্য ইউরুপে অবস্থিত সেনজেনভুক্ত আরেকটি ধনী এবং উচ্চ আয়ের দেশ হাঙ্গেরি। দেশটির রাজধানীর নাম বুদাপেস্ট। সরকারিভাবে হাঙ্গেরিয়ান ভাষা প্রচলিত। মুদ্রার নাম ফোরিন্ট। দেশটি ইউরোপের সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

  • আইসল্যান্ড

  • ইতালিঃ পশ্চিম ইউরোপের সেনজেনভুক্ত আরেকটি প্রাচীন এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং খাবারের জন্য বিখ্যাত দেশ ইতালি। দেশটি রাজধানীর নাম রোম। বিশ্ব বিখ্যাত দুটি শহরের নাম ভেনিস এবং মিলন, যে দুটি শহর ক্যানেল এবং ফ্যাশন এর জন্য সমৃদ্ধ। দেশটিতে অভিন্ন মুদ্রা ইউরো প্রচলিত।

  • লাটভিয়াঃ সেনজেনভুক্ত বালটিক সাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এবং লিথুনিয়া ও এস্তোনিয়ার মধ্যবর্তী ইউরোপের ছোট দেশ লাটভিয়া। দেশটি রাজধানীর নাম রিগা। সরকারিভাবে লাটবিয়ান ভাষা প্রচলিত। মুদ্রার নাম ইউরো।

  • লিচেনস্টেইন

  • লিথুয়ানিয়া

  • লুক্সেমবার্গ

  • মালটা

  • নেদারল্যান্ডসঃ ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমে সেনজেনভুক্ত আরেকটি ধনী দেশ নেদারল্যান্ড। দেশটির রাজধানীর নাম আমস্টারড্যাম। দেশটির টিউলিপ বাগান, সাইক্লিং রুট, উইন্ড মিল, ভ্যানগগ মিউজিয়াম, এনা ফ্র্যাঙ্ক এর দেশ হিসেবে বিখ্যাত। সরকারিভাবে দেশটিতে ডাচ ভাষা প্রচলিত এবং মুদ্রার নাম ইউরো।

  • নরওয়ে

  • পোল্যান্ড

  • পর্তুগাল

  • স্লোভাকিয়া

  • স্লোভেনিয়া

  • স্পেন

  • সুইডেন

  • সুইজারল্যান্ড

এই দেশগুলো সেনজেন চুক্তির আওতাভুক্ত হওয়ায় একবার সেনজেন ভিসা পেলে এই সমস্ত দেশে বাড়তি ভিসা ছাড়াই যাতায়াত করা যায়। তবে ভ্রমণের আগে প্রতিটি দেশের স্থানীয় নিয়ম ও সীমান্ত নীতিমালা জেনে নেওয়া ভালো।

সেনজেন ভুক্ত দেশ কয়টি ও কি কি

সেনজেনভুক্ত দেশ বলতে ইউরোপের সেইসব দেশকে বোঝানো হয়, যারা সেনজেন চুক্তির আওতায় এসেছে এবং পারস্পরিক সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই একে অপরের মধ্যে অবাধে যাতায়াতের সুযোগ করে দিয়েছে। ১৯৮৫ সালে ফ্রান্স এবং জার্মানির মধ্যকার একটি ছোট শহর সেনজেন-এ এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ধীরে ধীরে ইউরোপজুড়ে প্রসার লাভ করে।

বর্তমানে সেনজেনভুক্ত দেশের সংখ্যা ২৭টি, যা ইউরোপের একটি বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে বিস্তৃত। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, ইতালি, লাটভিয়া, লিচেনস্টেইন, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মালটা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং সর্বশেষে যুক্ত হওয়া দেশ ক্রোয়েশিয়া।

এই দেশগুলো একত্রে মিলেমিশে একটি অভিন্ন ভ্রমণ এলাকা বা অঞ্চল তৈরি করেছে, এর ফলে একজন পর্যটক একবার সেনজেন ভিসা পেলে এই ২৭টি দেশের মধ্যে আলাদা ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন। যেমন, আপনি ফ্রান্স থেকে আপনার যাত্রা শুরু করলেন, তাহলে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড বা ইতালিতেও যেতে পারবেন একই ভিসায়, পাসপোর্ট চেক ছাড়াই।

এটি শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, বরং ব্যবসায়িক কার্যক্রম, গবেষণা, চিকিৎসা এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রেও ব্যাপক সুযোগ তৈরি করেছে। সেনজেন চুক্তি ইউরোপের মধ্যে আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে এবং নাগরিকদের চলাফেরা সহজ করে তুলেছে। তবে যেহেতু প্রতিটি দেশের কিছু নিজস্ব নিয়ম-কানুন রয়েছে, তাই ভ্রমণের আগে প্রতিটি দেশের প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

সেনজেন ভুক্ত সর্বশেষ দেশ কোনগুলো

সেনজেন অঞ্চলের সম্প্রসারণের সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপ হিসেবে ২০২৪ সালের শেষ ও ২০২৫ সালের শুরুতে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া দুটি দেশ পুরোপুরি সেনজেন চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর আগে এই দুই দেশ আকাশ ও সমুদ্র পথে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয় ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ, আর ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণও চিরতরে তুলে দেওয়া হয় ।
আরো পড়ুনঃকুয়েত ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা ২০২৫

এর ফলে বর্তমানে সেনজেন ভুক্ত অঞ্চলে বর্তমানে মোট ২৯টি দেশ রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি EU সদস্য ভুক্ত দেশ এবং ৪টি EU-অসদস্য দেশের সঙ্গে এই দুই দেশও যুক্ত হয়েছে । বর্তমানে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার পূর্ণ প্রবেশ সেনজেন অঞ্চলকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনসহ আরো বহুমাত্রিক সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং ইউরোপীয় একতার সীকৃতি স্বীকৃত হয়েছে।

এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সমূহ এক নজরে দেখে নিনঃ

আকাশ ও সমুদ্র সীমান্ত মুক্তি: ইউরোপের দুটি দেশ রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ থেকে বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর থেকে নিজেদের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ছাড়িয়ে নেয়।

স্থল সীমান্ত মুক্তি: ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে স্থল সীমান্তে অবস্থিত চেকপোস্ট পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। 

সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি: যে কারণে সেনজেন অঞ্চলের সদস্য দেশের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৯ টি-২৫ EU, +৪ EU-অসদস্য (আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, লিচেনস্টেইন) এবং দুই নতুন দেশ।

অস্ট্রিয়ার অবসর: রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার পূর্ণ অন্তর্ভুক্তি রোধ করা অস্ট্রিয়ার বাধা অবসানের কারণে সম্ভব হয়।

অস্থায়ী সীমান্ত পর্যবেক্ষণ: নতুন নিয়ম অনুসারে প্রথম ৬ মাসের জন্য কিছু কিছু অভ্যন্তরীণ স্থল সীমান্তে অস্থায়ীভাবে নজরদারি রাখার বিশেষ অনুমতি দেয়া হয়েছিল, যা পরবর্তীতে সফলভাবে প্রয়োগ করায় অন্তর্ভুক্তি পায়।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুফল: চূড়ান্ত অন্তর্ভুক্তির ফলে যাত্রী ও পণ্যের চলাচল মসৃণ, ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ছে এবং সীমান্ত পারাপারে সময় ও খরচ উভয়ই কমছে ।

যাত্রা ও ব্যবসার সুবিধা: পর্যটক, প্রযুক্তিবিদ, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনে সুবিধা তৈরি হয়েছে, কারণ রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার সীমান্তপথে আর আর্থসীমান্ত বাধা নেই ।

ইউরোপের-সেনজেনভুক্ত-দেশের-তালিকা

সেনজেন ভুক্ত দেশ মানে কি

সেনজেনভুক্ত দেশ বলতে ইউরোপের সেই দেশগুলোকে বোঝায়, যারা পারস্পরিক একটি চুক্তির মাধ্যমে তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে, যাতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে ভিসা বা পাসপোর্ট চেক ছাড়াই যাতায়াত করা যায়। এই চুক্তির নাম ‘সেনজেন চুক্তি’, যা প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। ধীরে ধীরে অনেক ইউরোপীয় দেশ এতে যুক্ত হতে থাকে। 

ফলে যারা সেনজেন অঞ্চলের কোনো একটি দেশের ভিসা পান, তারা এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোতেও অবাধে ঘুরতে পারেন, আলাদা ভিসা ছাড়াই। এই ব্যবস্থা ইউরোপে পর্যটন, ব্যবসা ও মানুষের চলাচলকে সহজ করেছে। সেনজেনভুক্ত দেশগুলো শুধু রাজনৈতিকভাবে একত্র নয়, বরং বাস্তবিক অর্থেই এক ধরনের অভিন্ন সীমান্ত নীতিতে একসাথে কাজ করে যাচ্ছে।


সেনজেন ভুক্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সমূহ নিচে দেয়া হলঃ
  • সেনজেন চুক্তি প্রথম চালু হয় ১৯৮৫ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যেকার এক ছোট শহর সেনজেনে।

  • সেনজেনভুক্ত দেশগুলো একে অপরের মধ্যে সীমান্তে কোনো রকম কঠোর চেকিং ছাড়াই চলাচলের সুযোগ প্রদান করে।

  • বর্তমানে মোট ২৯টি দেশ এই চুক্তির আওতাভুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ সদস্য।

  • একবার সেনজেন ভিসা পেলে আপনি ওই ভিসা দিয়ে সব সেনজেন দেশে ঘুরে দেখতে পারেন।

  • সেনজেন এলাকা ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় কারণ হলো – সময়, টাকা এবং ঝামেলা—all কম লাগে।

  • ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের জন্য এই চুক্তি বড় সুবিধা দিয়ে থাকে।

  • সাম্প্রতিক সময়ে দুটি দেশ যেমনঃ রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া সর্বশেষ দেশ হিসেবে পুরোপুরি সেনজেন এলাকায় যোগ দিয়েছে।

  • সেনজেন অঞ্চলে ভ্রমণ মানে হলো ভিসা একটি কিন্তু বহু দেশের অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ।

সেনজেন দেশের সুবিধা কি

সেনজেন চুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো একবার ভিসা পেলে আপনি অনেকগুলো ইউরোপীয় দেশে ঘুরতে পারেন, তাও একটিমাত্র ভিসা দিয়েই। এটা শুধু ভ্রমণের সুবিধা নয়, বরং ব্যবসা, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্যও দারুণ সহায়ক। যেমন, আপনি যদি জার্মানিতে গিয়ে থাকেন, সেখান থেকে চাইলে ফ্রান্স, ইতালি বা স্পেনেও যেতে পারবেন, নতুন করে আর কোনো ভিসা লাগবে না।

এতে সময় যেমন বাঁচে, খরচও অনেক কমে যায়। এছাড়া সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সীমান্তে পাসপোর্ট চেক না থাকায় যাতায়াত অনেক সহজ হয়, যেটা পর্যটকদের জন্য এক বিশাল সুবিধা। যারা ব্যবসা করেন বা ইউরোপে একাধিক জায়গায় কাজ করেন, তাদের জন্য সেনজেন ব্যবস্থা অনেকটাই মুক্তভাবে চলাফেরার সুযোগ তৈরি করেছে।

শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হয়, কারণ গবেষণা বা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের সময় বিভিন্ন দেশে সহজে যাওয়া যায়। সব মিলিয়ে, সেনজেন একটি নমনীয়, আধুনিক এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা যা ইউরোপজুড়ে মানুষ ও পণ্যের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করেছে।

নিচে এক নজরে সেনজেন ভুক্ত দেশের সুবিধাগুলো দেখে নিনঃ

  • একটি সেনজেন ভিসা দিয়ে সেনজেনভুক্ত ২৯টি দেশে ভ্রমণ করা যায়, কোনরকম আলাদা ভিসা ছাড়াই।

  • এ কারণে সীমান্তে বারবার পাসপোর্ট দেখানোর কোনোরকম ঝামেলা নেই, যা ভ্রমণকারীদের সময় ও চাপ দুই-ই কমায়।

  • ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের জন্য বহু দেশে দ্রুত যাওয়া-আসা সম্ভব হয়।

  • পর্যটকদের খরচ কমে, কারণ একাধিক দেশের জন্য একটাই ভিসা যথেষ্ট।

  • শিক্ষার্থীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সহজে অংশ নিতে পারে গবেষণা বা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে।

  • পণ্য পরিবহন ও ব্যবসায়িক যোগাযোগ অনেক গতিশীল হয় সেনজেন অঞ্চলে।

  • যেসব দেশ সেনজেনভুক্ত, সেগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাও আরও মজবুত হয়।

  • জরুরি প্রয়োজনে যেমনঃ চিকিৎসা সেবা নিতে দ্রুত অন্য দেশে যাওয়া সম্ভব হয় কোনরকম বিধিনিষেধ ছাড়াই 

সেনজেন ভিসা কি

সেনজেন ভিসা হলো এমন একটি ভিসা, যেটি পেলে আপনি ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে একসাথে ঘুরে দেখতে পারেন-একটা ভিসা দিয়েই। এই ভিসা মূলত সেনজেন চুক্তিতে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে অবাধ যাতায়াতের সুবিধা দেয়। মনে করুন, আপনি ফ্রান্সের ভিসা নিয়ে ইউরোপ যাচ্ছেন।

এই ভিসা দিয়ে আপনি ফ্রান্স ছাড়াও জার্মানি, ইতালি, স্পেন, সুইজারল্যান্ডসহ আরও অনেক দেশে প্রবেশ করতে পারবেন-নতুন করে আর কোনো ভিসা লাগবে না। 

এটি সাধারণত ভ্রমণ, ব্যবসা, চিকিৎসা, বা পারিবারিক কাজে স্বল্প মেয়াদে ইউরোপে থাকার অনুমতি দেয়। সেনজেন ভিসা মূলত ‘শর্ট-স্টে ভিসা’, যার মেয়াদ সাধারণত ৯০ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে ১৮০ দিনের মধ্যে। তবে এর আওতায় থাকা সুবিধাগুলো অনেক বড়, কারণ এটি সময় ও টাকা দুই-ই বাঁচায় এবং একসাথে অনেক দেশের অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ দেয়।

সেনজেন ভিসা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে দেখে নিনঃ

  • সেনজেন ভিসা দিয়ে মোট ২৯টি ইউরোপীয় দেশে ভ্রমণ করা যায় (২০২৫ অনুযায়ী)।

  • এই ভিসা মূলত শর্ট-স্টে ভিসা, যা একসাথে সর্বোচ্চ ৯০ দিন থাকার অনুমতি দেয়।

  • একবার ভিসা নিলে, সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চলাফেরা করতে আলাদা ভিসা লাগে না।

  • সেনজেন ভিসা ভ্রমণ, ব্যবসা, চিকিৎসা বা পারিবারিক কারণে নেওয়া যেতে পারে।

  • ভিসার আবেদন করতে হয় মূলত যে দেশে আপনি সবচেয়ে বেশি সময় থাকবেন, সেই দেশের দূতাবাসে।

  • সেনজেন ভিসা পেতে আবেদনকারীকে পাসপোর্ট, ছবি, ট্রাভেল প্ল্যান, বিমার কাগজপত্র, অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ জমা দিতে হয়।

  • এই ভিসা থাকলে ইউরোপে যাতায়াত অনেক সহজ, মসৃণ এবং নির্ঝঞ্ঝাট হয়।

  • সেনজেন ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পুনরায় আবেদন করতে হয়, একে এক্সটেন্ড করা সাধারণত সম্ভব নয়।

ইউরোপের-সেনজেনভুক্ত-দেশের-তালিকা

ইউরোপের নন সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা ২০২৫

ইউরোপের নন সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা 2025 সম্পর্কে আর্টিকেলের এই পর্যায়ে জানতে পারবেন। ইউরোপের নন সেনজেন ভুক্ত দেশগুলো সেনজেন ভিসার আওতায় পড়ে না, তাই সেখানে যেতে হলে আলাদা ভিসা নিতে হয় অথবা নির্দিষ্ট দেশের নিয়ম অনুযায়ী ভ্রমণ করতে হয়। নন-সেনজেন দেশগুলো তাদের নিজস্ব সীমান্ত আইন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ভিসা নীতিমালা বজায় রেখেছে। 

তবে ইউরোপের নন সেনজেন ভুক্ত দেশগুলো পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুনঃইতালিতে সর্বনিম্ন বেতন কত আপডেট তথ্য
যেমনঃ যুক্তরাজ্য বা তুরস্কে প্রবেশ করতে গেলে সেনজেন ভিসা চলবে না-তাদের জন্য ভিন্ন আবেদন করতে হবে। এ কারণে এই দেশগুলোতে ভ্রমণ করার আগে ভালোভাবে পরিকল্পনা ও তথ্য জেনে যাওয়াটা দরকার।

যদিও ভিসার ঝামেলা কিছুটা বেশি, কিন্তু এই দেশগুলোর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্থানীয় আতিথেয়তা অনেক পর্যটকের কাছে মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

ইউরোপের নন সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা (২০২৫ অনুযায়ী) নিচে দেওয়া হলঃ
  • যুক্তরাজ্য

  • আয়ারল্যান্ড

  • তুরস্ক

  • সাইপ্রাস

  • বেলারুশ

  • ইউক্রেন

  • মলডোভা

  • আলবেনিয়া

  • সার্বিয়া

  • বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা

  • মন্টেনিগ্রো

  • কসোভো

  • উত্তর মেসিডোনিয়া

  • জর্জিয়া

  • আর্মেনিয়া

  • আজারবাইজান

  • রাশিয়ার ইউরোপীয় অংশ

FAQ/সাধারণ প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃসেনজেন ভুক্ত দেশ বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃসেনজেনভুক্ত দেশগুলো হলো ইউরোপের সেই দেশ, যেখানে একবার ভিসা নিয়ে অন্য দেশগুলোতে যাওয়া যায় পাসপোর্ট চেক ছাড়াই।

প্রশ্নঃবর্তমানে সেনজেনভুক্ত দেশের সংখ্যা কত?
উত্তরঃ২০২৫ সালের হিসাবে সেনজেনভুক্ত দেশের সংখ্যা ২৯টি।

প্রশ্নঃসেনজেন চুক্তি প্রথম কোথায় হয়?
উত্তরঃসেনজেন চুক্তি প্রথম ১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গের সেনজেন শহরে স্বাক্ষরিত হয়।

প্রশ্নঃসেনজেনভুক্ত দেশগুলো কি সব ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য?
উত্তরঃসব না-কিছু সেনজেন দেশ EU-এর বাইরেও রয়েছে, যেমন সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে।

প্রশ্নঃসেনজেনভুক্ত দেশের কয়েকটি নাম বলুন।
উত্তরঃফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন।

প্রশ্নঃসেনজেন ভিসা দিয়ে কয়টি দেশে যাওয়া যায়?
উত্তরঃসেনজেন ভিসা দিয়ে ২৯টি দেশে ভ্রমণ করা যায়।

প্রশ্নঃসর্বশেষ কোন দেশগুলো সেনজেনে যুক্ত হয়েছে?
উত্তরঃরোমানিয়া ও বুলগেরিয়া সর্বশেষ ২০২4–2025 সালে সম্পূর্ণভাবে সেনজেনে যোগ দেয়।

প্রশ্নঃসেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ভিসা ছাড়া যাওয়া যায় নাকি?
উত্তরঃবাংলাদেশসহ বেশিরভাগ দেশের নাগরিকদের জন্য সেনজেন ভিসা আবশ্যক।

প্রশ্নঃসেনজেন দেশগুলোর মধ্যে যাওয়া-আসায় কী সুবিধা?
উত্তরঃএকবার প্রবেশ করলে অন্য সেনজেন দেশে যেতে পাসপোর্ট দেখাতে হয় না।

লেখকের মন্তব্যঃ ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা

ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশের তালিকা দেখলে বোঝা যায়, ইউরোপের এক বড় অংশ একটি অভিন্ন নীতির আওতায় এসেছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই দেশগুলোর মধ্যে মুক্ত যাতায়াতের সুবিধা শুধু ভ্রমণকারীদের জন্য নয়, বরং ব্যবসা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রেও দারুণ কার্যকর।

একটাই ভিসা নিয়ে একাধিক দেশে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ অনেকের স্বপ্নপূরণ করে দেয়। বিশেষ করে যারা ইউরোপ একবারে ঘুরতে চান, তাদের জন্য সেনজেন চুক্তি এক বিশাল সুবিধা। তবে প্রতিটি দেশ নিজস্ব কিছু নিয়ম মেনে চলে, তাই সচেতনভাবে ভ্রমণ পরিকল্পনা করাটা জরুরি।

প্রিয় পাঠক, আশা করি এ কন্টেনটি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে এবং এই কনটেন্টের দ্বারা আপনারা উপকৃত হতে পারবেন। যদি এই কন্টেন্টের দ্বারা আপনারা উপকৃত হতে পারেন তবে এই কন্টেনটি আপনার পরিচিতজন দের নিকট শেয়ার করতে পারেন যাতে তারা এই কনটেন্টটি পড়ে উপকৃত হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

comment url