কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি ও বেতন কত ২০২৫ (সর্বশেষ আপডেট)
Salma Mili
১৭ জুন, ২০২৫
কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি ও বেতন কত ২০২৫ সর্বশেষ আপডেট তথ্য সম্পর্কে আপনাদের অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে। কুয়েত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশের মধ্যে একটি। এজন্য দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশী কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যস্থল হিসেবে পরিচিত।
২০২৫ সালে কুয়েতের অর্থনীতি ধীরে ধীরে তেল নির্ভরতা কমিয়ে আরো বিভিন্ন খাত যেমনঃ নির্মাণ, স্বাস্থ্য সেবা, তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিসেবা খাতে বিস্তার লাভ করছে। এর ফলে এই খাত গুলোকে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের শ্রমিকের চাহিদা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে।
বিশেষ করে নির্মাণ শ্রমিক, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, ড্রাইভার, ক্লিনার, নার্স, হিসাবরক্ষক এবং আইটি পেশাজীবীদের ব্যাপক চাহিদা দেখা যাচ্ছে। কাজের ধরন ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে বেতনও ভিন্ন হয়ে থাকে।
তাই আপনি যদি ২০২৫ সালে কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি ও বেতন কত এ বিষয়ে সর্বশেষ আপডেট তথ্য জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। পোস্ট সূচিপত্রঃ
কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি ও বেতন কত ২০২৫
কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি ও বেতন কত ২০২৫ সালে কুয়েতের শ্রম বাজারে বিভিন্ন ধরনের পেশার চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তেল নির্ভর অর্থনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশটির সরকার আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিশেষ নজর দিয়েছে। এজন্য দেশটির অর্থনীতি যেমন পুনর্গঠনের পথে এগোচ্ছে তেমনি বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে।
এরই প্রেক্ষিতে কুয়েতে যে সকল কাজের চাহিদা বর্তমান বাজারে সবচেয়ে বেশি আমি তার একটি তালিকা তৈরি করেছি, এক নজরে দেখে নিনঃ
অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পঃ নির্মাণ শ্রমিক, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, ওয়েল্ডার ও ড্রাইভারদের ব্যাপক প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খাতঃ ওয়েটার, ক্লিনার, কুক এবং হাউস কিপারদের চাহিদাও বেড়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীঃ নার্স ও হাসপাতাল সহকারীসহ স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীদের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি, বিশেষ করে দক্ষ নার্স ও কেয়ারগিভারদের।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতঃ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফটওয়্যার ডেভেলপার, নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান ও সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টদের প্রতি প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ বাড়ছে।
অদক্ষ শ্রমিকের বেতনঃ বেতনের দিক দিয়ে দেখা যায় অদক্ষ ও সাধারণ শ্রমিকরা মাসে গড়ে ৯০ থেকে ১৫০ কুয়েতি দিনার আয় করেন। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩৫০০০ থেকে ৬০০০০ টাকা।
দক্ষ শ্রমিকের বেতন কাঠামোঃ অন্যদিকে দক্ষ পেশাজীবীদের মধ্যে ড্রাইভাররা মাসে ২০০-৩০০ দিনার, নার্সরা ৪০০-৬০০ দিনার এবং আইটি পেশাজীবীরা প্রায় ৫০০- ১০০০ দিনার পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
এসব কাজের পাশাপাশি ওভারটাইম,থাকা ও খাওয়ার সুবিধা ও অনেক সময় কোম্পানি থেকে প্রদান করা হয় যা অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য আরেকটা আকর্ষণীয় দিক। এইসব কারণে ২০২৫ সালে কুয়েত দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের শ্রমিকদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের শ্রমিকদের কুয়েতে যাওয়ার আগ্রহ বর্তমানে দেখা যাচ্ছে।
নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন সর্বশেষ আপডেট তথ্য অনুযায়ী কুয়েতে কোন কোন কাজের চাহিদা বেশি সাথে প্রতিটি কাজের বেতন কাঠামো সম্পর্কে বিস্তারিত।
দক্ষ বনাম অদক্ষ শ্রমিক কার চাহিদা বেশি
কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি ও বেতন কত ২০২৫ সালে কুয়েতে শ্রম বাজারে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের শ্রমিকেরি চাহিদা বিদ্যমান থাকলেও সামগ্রিকভাবে দক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।
কুয়েত সরকার এখন তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে সরে এসে অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তির খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। ফলে এই খাত গুলোকে পেশাদার এবং প্রশিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
যেমনঃ নার্স, হিসাব রক্ষক, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, হেভি ড্রাইভার, আইটি বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি পেশায় অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের প্রতি নিয়োগকর্তারা আগ্রহী। এর পাশাপাশি উন্নত বেতন আবাসন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ও এসব দক্ষ কর্মীদের জন্য বরাদ্দ থাকে।
অন্যদিকে অদক্ষ শ্রমিক যেমনঃ ক্লিনার, হেলপার, রেস্টুরেন্ট সহকারি, কৃষি শ্রমিক প্রভৃতি কাজেও প্রচুর লোকবল প্রয়োজন হয়। তবে এসব পেশায় শ্রমিকের সহজলভ্যতা ও প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় চাহিদা থাকলেও বেতন তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়া অদক্ষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে চাকরি নিরাপত্তা এবং উন্নতির সুযোগও সীমিত।
বর্তমান বৈশ্বিক শ্রমবাজারের যেখানে দক্ষতা একটি বড় মূলধন সেখানে কুয়েতও ব্যতিক্রম নয়। তাই কুয়েত সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দীর্ঘমেয়াদী ও ভালো আয়ের নিশ্চয়তার জন্য যে কোনো চাহিদা সম্পন্ন কাজে দক্ষতা অর্জন এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নির্মাণ ও প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ
কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি ও বেতন কত ২০২৫ সালে কুয়েতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পটভূমিতে নির্মাণ ও প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেশের অবকাঠামগত উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, সড়ক, ব্রীজ এবং সরকারি স্থাপনাগুলো নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
ফলে নির্মাণ শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার এবং সাইট সুপারভাইজার এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব পেশায় কাজ করা শ্রমিকরা সাধারণত মাসে ১৫০ থেকে ৩০০ কুয়েতি দিনার পর্যন্ত আয় করেন ওভারটাইমসহ, যা ক্ষেত্র বিশেষে আরো বাড়তে পারে।
অন্যদিকে কুয়েত ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়ায় প্রযুক্তির খাতেও দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দ্রুত বেড়েছে। সফটওয়্যার ডেভেলপার ,ওয়েব ডিজাইনার, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার,ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের নিয়োগে আগ্রহী বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি ও সরকারি সংস্থা।
এই পেশাগুলোতে মাসিক বেতন ৫০০ থেকে ১২০০ কুয়েতি দিনারের মধ্যে হতে পারে যা কর্মীর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। প্রযুক্তি খাতে কর্মরত ব্যক্তিরা শুধু উচ্চ বেতনই নয় বরং দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার উন্নয়নের সুযোগ পান।
এই দুই খাত নির্মাণ ও প্রযুক্তি কুয়েতের অর্থনীতির ভিত্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য এগুলো এখন সবচেয়ে সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকলে এই খাতে কাজের সুযোগ ও উন্নতির সম্ভাবনা অনেক বেশি।
স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীদের জন্য ভালো খবর
২০২৫ সালের কুয়েতের স্বাস্থ্য সেবা খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা স্বাস্থ্য সেবা পেশাজীবীদের জন্য একটি ভালো খবর। করোনা ভাইরাস মহামারীর পর স্বাস্থ্য খাতের প্রতি কুয়েত সরকারের মনোযোগ বেড়ে যায় এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নতুন হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
এর ফলে দেশজুড়ে দক্ষ নার্স, প্যারামেডিক, ফিজিওথেরাপিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং কেয়ারগিভারদের চাহিদা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
বিশেষ করে বিদেশি নার্স ও কেয়ার সহকারীদের জন্য নিয়োগের হার গত বছরে তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। কুয়েতে কাজ করতে ইচ্ছুক নার্সদের অবশ্যই প্রয়োজনীয় ডিপ্লোমা বা ডিগ্রী ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা এবং নির্দিষ্ট লাইসেন্স থাকতে হয়।
বেতন কাঠামো ও আকর্ষণীয় একজন অভিজ্ঞ নার্স মাসে প্রায় ৪০০-৭০০ কুয়েতি দিনার পর্যন্ত আয় করতে পারেন যা বাংলাদেশি টাকার প্রায় ১.৫ থেকে ২.৮ লাখ টাকার সমান।
অনেক ক্ষেত্রে থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসা সুবিধা ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বহন করে যা অভিবাসী পেশাজীবীদের জন্য বাড়তি সুবিধা। এছাড়াও স্বাস্থ্য খাতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতির সুযোগ থাকায় এটি দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার গড়ার জন্য একটি নিরাপদ ক্ষেত্র।
তাই বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অনেক স্বাস্থ্যকর্মী বর্তমানে কুয়েতকে পেশাগত গন্তব্য হিসেবে বেছে নিচ্ছেন যা তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হচ্ছে।
হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খাতে কাজের পরিসর ও বেতন
বর্তমান সময়ে কুয়েতের হোটেল ও রেস্তোরায় কর্মী নিয়োগ চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন দিন দেশটির পর্যটন শিল্প সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসার কার্যক্রম বিস্তৃতি লাভ করেছে। এর সুদূর প্রভাব পড়েছে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীদের চাহিদার উপর।
বিশেষ করে ওয়েটার, কুক, সহকারী বাবুর্চি, ক্লিনার, হাউজকিপার, রিসেপশনেস্ট এবং কিচেন হেলপারদের নিয়োগে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক হোটেল ও রেস্তোরা গুলো আগ্রহ দেখাচ্ছে। এছাড়াও অনেক ফাস্ট ফুড চেইন ও কফিশপেও নিয়মিত কর্মী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
এই খাতে চাকরি পাওয়ার জন্য প্রার্থীদের সাধারণত খুব বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা না লাগলেও সৌজন্যমূলক ব্যবহার,পরিচ্ছন্নতা, সময়নিষ্ঠতা এবং মৌলিক ইংরেজি ভাষাজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের মাসিক গড় বেতন সাধারণত ১২০ থেকে ২৫০ কুয়েতি দিনার পর্যন্ত।
এই হিসেবে একজন বাংলাদেশী শ্রমিক মাস শেষে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা উপার্জন করেন।
দক্ষ বাবুর্চি বা অভিজ্ঞ রেস্টুরেন্ট ম্যানেজারদের বেতন আরও বেশি হতে পারে প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ দিনার পর্যন্ত। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা কোম্পানি থেকেই প্রদান করা হয় যা প্রবাসী কর্মীদের জন্য একটি বড় সুবিধা। এই খাতে নিয়মিত ওভারটাইম এবং টিপসের মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়ও সম্ভব, বিশেষ করে ব্যস্ত হোটেল বা আন্তর্জাতিক রেস্টুরেন্ট গুলোতে।
ফলে অল্প শিক্ষিত ও অদক্ষ কর্মীদের জন্য হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খাত কুয়েতে একটি স্থিতিশীল ও সম্ভাবনাময় কর্মসংস্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কুয়েতে ড্রাইভার, ক্লিনার, গার্ডের কাজের চাহিদা ও বেতন
২০২৫ সালে কুয়েতের বিভিন্ন খাতে অদক্ষ ও সাধারণ কাজের জন্য শ্রমিক নিয়োগের চাহিদা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ড্রাইভার, ক্লিনার ও নিরাপত্তা কর্মী (গার্ড) পেশাগুলোতে। দেশটির আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প খাতে এই ধরনের পেশার প্রয়োজন প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
ড্রাইভারদের মধ্যে হেভি ড্রাইভার ও লাইট ড্রাইভার এই দুই বিভাগে কর্মসংস্থান হয়। হেভি ড্রাইভাররা ট্রাক, বাস বা বড় গাড়ি চালান এবং সাধারণত মাসে ২৫০ থেকে ৪০০ কুয়েতি দিনার আয় করেন। অন্যদিকে লাইট ড্রাইভারদের বেতন ১৮০ থেকে ৩০০ দিনারের মধ্যে থাকে। অভিজ্ঞতা, কাজের ধরন এবং কোম্পানির ওপর নির্ভর করে এই পার্থক্য হয়ে থাকে।
ক্লিনারদের জন্য বেতন তুলনামূলকভাবে কম হলেও নিয়মিত ওভারটাইম এবং থাকা, খাওয়ার সুবিধা থাকায় মোট আয় সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছে। একজন ক্লিনার সাধারণত মাসে ৯০ থেকে ১৫০ কুয়েতি দিনার পান। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বড় কোম্পানিতে এই পরিমাণ কিছুটা বেশি হতে পারে।
নিরাপত্তা কর্মী গার্ডদের ক্ষেত্রে মাসিক বেতন ১২০ থেকে ২৫০ দিনারের মধ্যে হয়ে থাকে। অনেক নিরাপত্তা কর্মী ১২ ঘন্টা ডিউটি করার কারণে ওভারটাইমসহ তাদের আয় আরো বাড়ে।
এই পেশা গুলোতে শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে শারীরিক সক্ষমতা, সততা এবং দায়িত্ববোধকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। যদিও বেতন তুলনামূলকভাবে কম তবে নিয়মিত ইনকাম, থাকা-খাওয়া এবং সঞ্চয়ের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক শ্রমিক এই পেশা গুলো বেছে নিচ্ছেন।
আইটি ও প্রযুক্তির খাতে কাজের চাহিদা ও বেতন
কুয়েতের আইটি ও প্রযুক্তি খাতে পেশাজীবীদের চাহিদা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটাল রূপান্তর, সাইবার নিরাপত্তা, ই-গভর্নেন্স এবং অনলাইন সার্ভিসে প্রসার কুয়েত সরকার ও সরকারি খাতকে প্রযুক্তি নির্ভর করে তুলছে।
এরফলে সফটওয়্যার ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, ডাটাবেজ এডমিনিস্ট্রেটর,আইটি সাপোর্ট এক্সপার্ট এবং সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্টদের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। অনেক আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় কোম্পানি দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে যেখানে বাংলাদেশের প্রযুক্তি পেশাদারদের সম্ভাবনা রয়েছে।
এই খাতে আয় অন্যান্য অনেক পেশার তুলনায় তুলনামূলক বেশি। একজন অভিজ্ঞ আইটি পেশাজীবীর কুয়েতে গড়ে মাসে ৫০০ থেকে ১২০০ কুয়েতি দিনার পর্যন্ত আয় করতে পারেন যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২ থেকে ৫ লাখের মতো। এর পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট ভাড়া ট্রান্সপোর্ট এবং স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা প্রদান করা হয়।
নতুনদের জন্য শুরুতে আয় কিছুটা কম হলেও অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আয় দ্রুত বাড়ে।
আইটি খাতে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহীদের জন্য কুয়েত একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য হতে পারে। সঠিক প্রশিক্ষণ,আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকলে এই খাতে বাংলাদেশের তরুণরা কুয়েতে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে সক্ষম হবেন।
কুয়েতে কাজের সুবিধা ও ওভারটাইম আয়
কুয়েতে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য কাজের পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা অনেকটাই স্থিতিশীল এবং নিয়মিত আয়ের একটি নিরাপদ মাধ্যমে হিসেবে বিবেচিত। শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মীদের জন্য নির্ধারিত কর্মঘন্টা সাধারণত দিনে ৮ ঘন্টা বা সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা।
এর অতিরিক্ত সময় কাজ করলে ওভারটাইম গণ্য হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওভারটাইমের জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক প্রদান করা হয় যা মাসিক আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হতে পারে। অনেক কোম্পানি প্রতিদিন ২-৪ ঘন্টা ওভারটাইম করায় যা মাস শেষে মূল বেতনের চেয়ে ৩০ থেকে ৫০% পর্যন্ত বেশি আয় এনে দিতে পারে।
কাজের সুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো বিনামূল্যে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা। বিশেষ করে নির্মাণ হোটেল, রেস্তোরাঁ, সিকিউরিটি এবং পরিছন্নতা খাতে নিয়োজিত কর্মীদের জন্য কোম্পানিগুলো সাধারণত আবাসন, তিন বেলা খাবার, ইউনিফর্ম এবং চিকিৎসার কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে।
এতে করে কর্মীদের জীবনযাত্রার খরচ অনেকটাই কমে যায় এবং তারা অধিক অর্থ দেশে পাঠাতে সক্ষম হন। কিছু চাকরি বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বার্ষিক ছুটি, বীমা ও গ্রাজুয়েটের সুবিধা পাওয়া যায়।
এছাড়াও অনেক নিয়োগকর্তা কর্মীদের দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলে পদোন্নতি বা কাজের স্থান পরিবর্তন এর সুযোগও দেন। ফলে যারা নিয়মিত ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন তাদের জন্য কুয়েতে কাজ করা শুধুমাত্র একটি আয়ের উৎস নয় বরং একটি ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার দিকও খুলে দেয়।
বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য কুয়েতে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য কুয়েতে কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ২০২৫ সালে আশাব্যঞ্জক ও ইতিবাচক। কুয়েতের অর্থনীতি অবকাঠামো উন্নয়ন স্বাস্থ্যসেবা,পরিবহন এবং তথ্য প্রযুক্তির মত খাতে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে যার ফলে এসব ক্ষেত্রে দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা বেড়েছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে আসা বহু কর্মী কুয়েতের বিভিন্ন খাতে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন যা ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। বাংলাদেশের শ্রমিকরা পরিশ্রমী, সহজে খাপ-খাওয়াতে সক্ষম এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে কাজ করতে রাজি থাকায় কুয়েতি নিয়োগ কর্তাদের কাছে তাদের চাহিদা বেশি।
বিশেষ করে নির্মাণ, ড্রাইভিং, ক্লিনিং, সিকিউরিটি, রেস্টুরেন্ট ও হোটেল খাত ছাড়াও নার্স, টেকনিশিয়ান ও আইটি পেশার দক্ষ বাংলাদেশিদের জন্য উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। সরকারিভাবে বৈধ পথে কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং ভাষা শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশ আরও বড় সংখ্যায় দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারবে।
তবে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য বাংলাদেশী কর্মীদের উচিত দক্ষতা অর্জন, প্রাথমিক ভাষা জ্ঞান এবং ন্যূনতম পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জন করে কুয়েতে চাকরির বাজারে প্রবেশ করা। সঠিক প্রস্তুতি থাকলে কুয়েত বাংলাদেশের জন্য একটি লাভজনক বাজার হিসেবে ভবিষ্যতেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
FAQ/সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ ২০২৫ সালে কুয়েতে সবচেয়ে বেশি চাহিদা কোন পেশায়?
উত্তরঃ নির্মাণ শ্রমিক,নার্স,ড্রাইভার ও আইটি পেশাজীবীদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
প্রশ্নঃ কুয়েতে অদক্ষ শ্রমিকদের গড় বেতন কত?
উত্তরঃ মাসে প্রায় ৯০ থেকে ১৫০ কুয়েতি দিনার ওভারটাইমে কিছুটা বাড়ে।
প্রশ্নঃ ড্রাইভারদের কুয়েতে গড় বেতন কত?
উত্তরঃ লাইট ড্রাইভারদের ১৮০ থেকে ৩০০ দিনার, হেভি ড্রাইভারদের ২৫০ থেকে ৪০০ দিনার।
প্রশ্নঃ নার্সদের কুয়েতে কত বেতন দেওয়া হয়?
উত্তরঃ অভিজ্ঞ নার্সদের বেতন ৪০০ থেকে ৭০০ কুয়েতি দিনার পর্যন্ত হতে পারে।
প্রশ্নঃ কুয়েতের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খাতে কাজের সুযোগ কেমন?
উত্তরঃ প্রচুর চাহিদা আছে বিশেষ করে ওয়েটার,কুক ও ক্লিনার পদের জন্য।
প্রশ্নঃ কুয়েতে আইটি পেশাজীবীরা কত আয় করেন?
উত্তরঃ গড়ে ৫০০ থেকে ১২০০ কুয়েতি দিনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বাড়ে।
প্রশ্নঃ ক্লিনারদের বেতন কত?
উত্তরঃ মাসে ৯০-১৫০ দিনার তবে কোম্পানি থাকা খাওয়া দিলে সঞ্চয় বেশি হয় ।
প্রশ্নঃ কুয়েতে ওভারটাইমের সুযোগ কি আছে?
উত্তরঃ হ্যাঁ,অনেক খাতে ওভারটাইম আছে যা মাসিক আয় ৩০ থেকে ৫০% বাড়াতে পারে।
প্রশ্নঃ দক্ষ শ্রমিকদের কি বেশি সুযোগ থাকে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, দক্ষ শ্রমিকদের বেতন নিরাপত্তা ও পদোন্নতির সুযোগ বেশি।
লেখকের মন্তব্যঃ কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি ও বেতন কত ২০২৫
কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি ও বেতন কত ২০২৫ সালে কুয়েতের শ্রমবাজারের দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের শ্রমিকের চাহিদা থাকলেও দক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা ও বেতন তুলনামূলকভাবে বেশি। এরমধ্যে নির্মাণ,স্বাস্থ্য সেবা, তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিবহন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ দ্রুত বাড়ছে।
অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য হোটেল রেস্টুরেন্ট ও পরিষেবা খাতে কাজের সুযোগ রয়েছে তবে বেতন সীমিত। ওভারটাইম ও থাকা খাওয়ার সুবিধা অনেক ক্ষেত্রে আয় বাড়াতে সহায়ক হচ্ছে। আমি মনে করি,যারা বিদেশে কাজ করতে আগ্রহী তাদের উচিত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কুয়েতের উচ্চ বেতনের খাতে প্রবেশের চেষ্টা করা।
প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা কুয়েতে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন আশা করি এই কনটেন্টটি পড়ে উপকৃত হবেন। এই কনটেন্টটি যদি আপনাদের ভালো লাগে এবং এটি দ্বারা যদি আপনারা উপকৃত হতে পারেন তবে, আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের নিকট শেয়ার করতে পারেন যাতে তারা এই কনটেন্টটি পড়ে উপকৃত হতে পারে।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url