বাংলাদেশের নদ-নদী রচনা- ২০টি পয়েন্ট ( ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম শ্রেণী)
বাংলাদেশের নদ-নদী রচনাটি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায়, রচনাটি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে পাঠ করতে হয়। বাংলাদেশের নদ-নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সিলেবাস ভিত্তিক রচনা।
যেহেতু এই রচনাটি প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের পাঠ করার প্রয়োজন হয়, এজন্য আমি আজকের প্রবন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ২০টি পয়েন্ট আকারে রচনাটি তুলে ধরব। তোমাদের যাদের প্রয়োজন হবে পুরো রচনাটি আত্মস্থ করতে পারো অথবা এখান থেকে নোট হিসেবে তৈরি করতে পারো। পোস্ট সূচিপত্রঃ
তাহলে চলো দেরি না করে রচনাটি শুরু করা যাক।
বাংলাদেশের নদ-নদী
ভূমিকাঃ বাংলাদেশের সবুজ বুকের উপর রূপালী জলশ্রোত নিয়ে বয়ে চলেছে অসংখ্য ছোট বড় নদ নদী। কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলাদেশকে তাই, "জলাভূমির ঢেউয়ে ভেজা বাংলাঃ বলে এ দেশকে অভিহিত করেছেন। উপনদী ও শাখা নদীসহ বাংলাদেশের নদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৪,১৪০ কিলোমিটার। ৭০০ বেশি ছোট-বড় নদী নিয়ে বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীঃ বাংলাদেশের সবগুলো নদীর একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা বেশ কঠিন। তবে বাংলাদেশের নদীর কথা বললে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী, শীতলক্ষা, তিস্তা, বুড়িগঙ্গা নদীর মত প্রধান নদীর নাম গুলো প্রথমে আমাদের মনে পড়ে। এছাড়াও রয়েছে ধরলা আড়িয়াল খাঁ, লৌহজং সহ আরো অনেক নাম না জানা নদী। ছোট-বড় প্রতিটি নদনদী আমাদের দেশে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
মেঘনাঃ বাংলাদেশের নদনদীর মধ্যে মেঘনা অন্যতম প্রধান একটি নদী। মেঘনা নদীর উৎপত্তিস্থল আসামের পাহাড়। সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মিলিত স্রোত আজমিরি গঞ্জের কাছে এসে "কালনী" নামে পরিচিতি পেয়েছে। শেষে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব বাজার এর কাছে এসে এ নদী মেঘনা নাম ধারণ করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস ও চাঁদপুরের ডাকাতিয়া মেঘনার দুটি শাখা নদী। গোমতী, মনু, বাউলাই মেঘনার উপনদী। এর মোট দৈর্ঘ্য ৩৩০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৩ হাজার মিটার।
পদ্মাঃ হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমাবহ থেকে পদ্মা নদীর উৎপত্তি। ভারতে পদ্মা নদী গঙ্গা নামে পরিচিত। মূলতঃ গঙ্গা নদীর যে ধারাটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তার নামই পদ্মা। বাংলাদেশের সবচেয়ে নাব্য নদী পদ্মার দৈর্ঘ্য ১১৫ কিলোমিটার এবং এর সর্বাধিক প্রস্থ ৫,৭১১ মিটার। এই নদী রাজশাহী জেলার দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গোয়ালন্দের নিকট যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। পদ্মার শাখা নদী গুলোর মধ্যে রয়েছে- কুমার, ভৈরব, গড়াই, মধুমতি, মাথাভাঙ্গা, আড়িয়াল খা।
যমুনাঃ যমুনা নদীর উৎস হিমালয় পর্বত থেকে। যমুনা নদী গোয়ালন্দের কাছে এসে পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ধলেশ্বরী যমুনার প্রধান শাখা নদী। এছাড়া ধরলা, তিস্তা, করোতোয়া ও আত্রাই যমুনার উপনদী। যমুনা নদীর দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার এবং সর্বাধিক প্রস্থ ১২০০ মিটার।
কর্ণফুলীঃ কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তি আসামের লুসাই পাহাড়। রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদী বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭৪ কিলোমিটার। কর্ণফুলী নদীর উপর বাঁধ দিয়ে নির্মিত হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ... কর্ণফুলী প্রধান উপনদী হল-হালদা, বোয়ালখালী ও কাসালং।
ব্রহ্মপুত্রঃ হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের মানস সরোবরে এই নদের উৎপত্তি। তিব্বতের পূর্ব দিকে ও আসামের পশ্চিম দিক দিয়ে নদীটি প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর উৎপত্তি স্থল থেকে দৈর্ঘ্য ২৮৫০ কিলোমিটার এবং এই নদীটির সর্বাধিক প্রস্থ ১০,৪২৬ মিটার। বংশী ও শীতলক্ষ্যা ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রধান শাখা নদী। ধরলা ও তিস্তা ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি উপনদী।
তিস্তাঃ তিস্তা নদীর উৎপত্তিস্থল চামোলি জেলার হিমালয় অঞ্চলের পাহাড়ি হিমবাহ "জহর গ্লেরিয়ার" থেকে, যা ভারতের সিকিমে অবস্থিত। এরপর নদীটি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় প্রবেশ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার।
ধরলাঃ ধরলা নদীর উৎপত্তি ভারতের সিকিম রাজ্য থেকে। এটি ভুটান ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং উত্তর থেকে দক্ষিনে প্রবাহিত হয়ে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে। নদীর দৈর্ঘ্য ২৫৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৯৭ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে। নদীটির প্রস্থ স্থান ও কালভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। বর্ষাকালে এর প্রস্থ বেড়ে প্রায় এক কিলোমিটার বা তারও বেশি হয়।
আমাদের জীবনে নদনদীর প্রভাবঃ নদীর সাথে বাঙ্গালীদের এক গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। যোগাযোগ ব্যবস্থায়, শিল্প ক্ষেত্রে, অর্থনীতি এবং আরো জানা-অজানা সেক্টরে নদনদীর প্রভাব অপরিসীম। নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এ দেশের অনেক মানুষের জীবন ব্যবস্থা। এ দেশের কবি সাহিত্যিক ও শিল্পীরা নদীকে নিয়ে সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য সাহিত্যকর্ম। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর "পদ্মা নদীর মাঝি" একটি বিখ্যাত উপন্যাস এবং পরবর্তীতে জীবনমুখী চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নদীর প্রভাবঃ বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। দেশের অধিকাংশ কৃষি ফসল উৎপাদন নদী নির্ভর। কৃষি জমিতে সেচ ব্যবস্থায় সহায়তাকারী তো বটেই, এছাড়া মাছ চাষে নদীর অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এদেশের নদীতে উৎপাদিত ইলিশ, চিংড়ি মাছ রপ্তানি করে প্রতিবছর দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদীর প্রভাবঃ বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদীর ভূমিকা ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ। নদীগুলোর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। পদ্মা সেতু ও যমুনা সেতু এদেশের দুটি প্রধান সেতু হিসেবে পরিচিত। নদী পথে মালবাহী ও যাত্রাবাহী নৌযান চলাচলের ফলে পন্য পরিবহন সহজ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হয়েছে। নদীগুলোর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য যেমন গতিপায়, তেমনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
শিল্প ক্ষেত্রে নদ-নদীর ভূমিকাঃ বাংলাদেশের শিল্প খাতে নদনদীর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী। নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে শিল্প কারখানা স্থাপন সহজতর হয়েছে। কারণ পানি সরবরাহ, কাঁচামাল পরিবহন এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য নদীপথে একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর মাধ্যম। টেক্সটাইল, চামড়া, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে নদীর পানি অপরিহার্যভাবে ব্যবহৃত হয়।
নদী সংরক্ষণ ও দখল রোধ করাঃ বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের বেশিরভাগ মানুষের জীবন জীবিকা নদীর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেক নদী এখন হুমকির সম্মুখীন। তাই নদীর গতিপথ যথাযথ রাখার জন্য নদী সংরক্ষণের বিকল্প নেই। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগ নদী সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, গৃহস্থালির বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে অধিক সংখ্যক বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করতে হবে। নদীর তীরবর্তী এলাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
নদীর তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। নদী ও নদীর তীর থেকে অতিরিক্ত বালি তোলা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে ড্রেজিং এর মাধ্যমে পলি সরানোর মাধ্যমে নদীর গভীরতা তৈরি করে স্বাভাবিক গতিপথ ফিরিয়ে আনতে হবে।
নদ-নদীর উপকারিতাঃ ইতিহাসের সুদূর অতীত থেকেই বাংলাদেশ শস্য শ্যামলা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক নীলাভূমি। আর এর মূলে রয়েছে নদনদীর অসামান্য অবদান। নদ-নদী শীতল জলের প্রবাহ এ দেশের মাটিতে যেমন প্রাণ রস সঞ্চার করে ফসলের সম্ভাবনা জাগে তোলে, তেমনি প্রাত্যহিক জীবন জীবিকার সন্ধানের জন্য করে তুলে কর্ম চঞ্চল। চাষাবাদের জন্য পানির প্রধান উৎস এবং বাণিজ্যিক পরিবহন পথ হিসেবে নদীগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। আবার নদী প্রণালী গুলো দেশের কৃষি ভমিতে পলি ছড়িয়ে দিয়ে প্রাকৃতিক উর্বরতা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করে।
নদীগুলো প্রতিবছর প্রায় 2.4 বিলিয়ন টন পলি বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করে, যার ফলে সমুদ্র মুখ বরাবর গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ভূমি। মৌসুমী বায়ু প্রবাহকালীন নদীগুলো সাগরে পানি নির্গমন করে থাকে। অর্থনীতি, শিল্প যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নদীর অবদান আমরা আগের পয়েন্ট গুলোতে জেনেছি। এভাবে নদীর অবদানে বাংলাদেশ চিরসবুজ দেশ হিসেবে গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে নদনদীর নেতিবাচক দিকঃ নদী ভাঙ্গন বাংলাদেশের একটি স্থানীয় ও পুনঃ সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ৪৮৯ টি থানার মধ্যে প্রায় ৯৪ থানায় নদী ভাঙ্গন ঘটেছে। আবার, নদী ভাঙনের পাশাপাশি অনেক অঞ্চল প্রতিবছর বন্যায় কবলিত হয়। অতি বৃষ্টিপাতের ফলে নদী থেকে পানি উপচে জলে ভাসিয়ে দেয় ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। ফলে ক্ষতি হয় প্রচুর ঘরবসতি, কৃষি জমির ফসল এমনকি পুকুরের মাছ চাষ। মানুষের মধ্যে দেখা দেয় মৌলিক চাহিদার অভাব। যেহেতু দেশের একই অঞ্চলেই প্রতিবছর বন্যা হয় তাই বলা যেতে পারে যে, এই সময়ে ওই সকল অঞ্চলে শিশুদের শিক্ষার দারুন ভাবে ব্যাহত হয়।
উপসংহারঃ নদ - নদীর অবদানে আমাদের এ বাংলাদেশ একদিকে যেমন হয়েছে সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা, তেমনি এদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার পথও হয়েছে সুগম। অপকারিতার তুলনায় নদীর উপকারিতা অনেক বেশি। বাঙালি জীবনের সাথে একাত্ম হয়ে আছে এদেশের প্রতিটি নদ নদী। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দায়িত্ব এই নদীগুলো সংরক্ষণ করা ও নদী দখল মুক্ত রাখা, তাহলেই আমরা নদী থেকে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে পারি।
লেখক এর মতামত
প্রিয় বন্ধুরা, বাংলাদেশের নদ-নদী রচনার ২০টি পয়েন্ট আজকের আর্টিকেলে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তোমরা যারা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছো, চাইলে পুরো রচনা কপি করে লিখতে পারো অথবা নোট হিসেবে তুলে নিতে পারো। বাংলাদেশের নদ নদী রচনাটি প্রতিবছর যেকোনো শ্রেণীতে পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়।
তাই গুরুত্বপূর্ণ এই রচনাটি ভালোভাবে পড়া জরুরী। এই আর্টিকেল থেকে রচনাটি তোমরা ভালোভাবে পড়তে পারবে আশা করি।

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url