দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ২০টি পয়েন্ট
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা নিয়ে আজকের এই প্রবন্ধ। বিজ্ঞানের অবদানকে স্মরণ করার জন্য দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনাটি প্রতি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
আমি আজকে বিজ্ঞান বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ এই রচনাটি ২০টি পয়েন্ট আকারে তুলে ধরব, যাতে করে ক্লাস ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম ক্লাসের যে কোনো শিক্ষার্থীদের উপকারে আসতে পারে। পোস্ট সূচিপত্র:তাহলে চলুন দেরি না করে মূল রচনাটি শুরু করা যাক।দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান- ভূমিকা
হাজার বছরের পরিক্রমায় মানুষের সভ্যতা আজ এক নতুন যুগে পৌঁছেছে। এই যুগ কে আমরা বিজ্ঞানের যুগ হিসেবে চিহ্নিত করি। মানুষের কাজ সহজ ও নিখুত করতেই দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রয়োগ করা হয়। পৃথিবী সহ এর বাইরেও সর্বত্র বিজ্ঞান ছড়িয়ে আছে। বিজ্ঞান অর্থ বিশেষ জ্ঞান, যার মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারে ও ভাবনায় যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটে চলেছে।
ঘরের কাজে বিজ্ঞান: বিজ্ঞান যেন মানব জীবনের প্রতিদিনে জননী স্নেহের মত জড়িয়ে আছে। ঘুম ভাঙার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যবহার রয়েছে। বিজ্ঞান এনে দিয়েছে কলের পানি- কখনো গরম কখনো ঠান্ডা, আবার মাথার উপরে এই পাখার বাতাস, রেডিওর গান, টেলিভিশনের মত মানুষকে একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিতে বিনোদন দেওয়ার যন্ত্র।
বিজ্ঞানের কৃপায় ফ্রিজের মধ্যে এখন অবস্থান করে মিনি বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে শাকসবজি রান্নার কাজে বিদ্যুতের ব্যবহার আজ শহরের ঘরে ঘরে। রয়েছে প্রচন্ড গরমে একটু স্বস্তি দিতে এয়ারকন্ডিশনার। দূরের কোন বন্ধুর কন্ঠ শোনা যাচ্ছে টেলিফোন ও মোবাইল ফোনে, এখন আর কষ্ট করে চিঠি পাঠাতে হচ্ছে না। মানুষের সময় অপচয় করতে হচ্ছে না সবকিছু হয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞানের জন্য ঘরে বসেই।
কর্মময় জীবনে বিজ্ঞান: সংসার জীবনের বাইরে মানুষের কর্মময় জীবন। সেখানেও মানুষ বিজ্ঞানের আশীর্বাদে ধন্য। কর্মজীবনে কম্পিউটারে ব্যবহার তো বেড়েছেই এর সাথে সাথে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য রয়েছে গাড়ি, বাস, প্রাইভেটকার মত আধুনিক যানবাহন। কর্মস্থলে নিরাপদ ও কম সময়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে মেট্রো রেল এর মত অত্যাধুনিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা।
অফিসের কাজ সহজ ও দ্রুত করতে যেকোনো কিছুর হার্ড কপি বা ডকুমেন্ট তৈরি করতে প্রিন্টার, কেনার, ওএমআর এর মত কাজের সহায়ক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বহুলাংষে বেড়েছে। এভাবে ঘরে বাইরে সমানতালে বিজ্ঞান হয়ে উঠেছে মানুষের অনুগত সহচর।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান: বর্তমান সময়ে রোগ নির্ণয় এবং রোগ দূরীকরণে বিজ্ঞানের অবদান অভাবনীয়। এক্সরে মেশিন, ইসিজি, এন্ডোসকপি, সিটি স্ক্যান, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, এনজিওগ্রাম, এমআরআই ইত্যাদির কল্যাণে এখনকার জটিল রোগ নির্ণয় করা অনেক সহজ হয়েছে। কিছুদিন আগেও যেখানে অনেক রোগ নিরাময় করা মানুষের জন্য কঠিন ছিল, বিজ্ঞানের জাদুকরী ক্ষমতার কারণে এখন বিভিন্ন টিকা, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি, ওষুধ সেবন ও সার্জারি করে বিভিন্ন ধরনের কঠিন রোগ থেকে মানুষ সহজেই মুক্তি পাচ্ছে।
কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান: বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কৃষি ব্যবস্থা আধুনিক বিজ্ঞান নির্ভর। বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক কৃষি যন্ত্রপাতি উন্নত দেশগুলোর কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক সাফল্য এনে দিয়েছে। যেমন: মোয়ার (শস্য ছেদনকারী যন্ত্র), রপার (ফসল কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (ফসল বাধার যন্ত্র), ফ্রেসিং মেশিন (ফসল মারাই যন্ত্র), ম্যানিউর spreader (সার বিস্তরণ যন্ত্র) ইত্যাদি। উন্নত বীজ উৎপাদন ও সেত ব্যবস্থা সহ কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অসামান্য ভূমিকা বর্তমানে চোখে পড়ার মতো।
শিক্ষা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান: শিক্ষা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ শুধু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরই না বরং প্রতিবন্ধীদেরও সাহায্য করেছে প্রতিনিয়ত। আজকের স্মার্ট ক্লাসরুম, কম্পিউটার, প্রজেক্টর এবং অনলাইন শিক্ষা বিজ্ঞানের দান। চ্যাট জিপিটির মত বুদ্ধিমান বন্ধু ও তথ্যের অগাধ সমুদ্রসম্পন্ন বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য নিতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছে। ব্রেইলের মাধ্যমে অন্ধ শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারছে। এছাড়া ওএমআর এর মত যন্ত্র শিক্ষকদেরও পাঠদানে অনেক সাহায্য করছে।
শিল্প ক্ষেত্রে বিজ্ঞান: শিল্প ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের রয়েছে অসামান্য অবদান। বড় বড় শিল্প কলকারখানায় যে সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় তা মূলত: বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে সম্ভব হয়েছে। শিল্প কলকারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে শ্রমিকের শ্রম অনেকটাই কমে এসেছে এবং কাজের ঘন্টায়ও এসেছে আমূল পরিবর্তন। যে কোন কাজ এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সহজ ও দ্রুততর হয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান: যুগেযুগে মানুষ আটকে ছিল দূরত্বের জালে। এখন যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের উন্নতি সত্যিই চমকপ্রদ। আমরা যে পিচঢালা রাস্তা বানিয়েছি তার ভেতরেও রয়েছে বিজ্ঞানের কারিগরি জ্ঞান। গাড়ি, ট্রেন, স্কুটার, রিক্সা, সাইকেল মোটরসাইকেল এর সকল কিছুর আবিষ্কার যেকোনো দূরত্বের পথটাকে কাছে এনে দিয়েছে। আবার, নৌকা ও জাহাজের আবিষ্কারের ফলে সমুদ্রপথ হয়ে উঠেছে মানুষের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম।
এছাড়াও মেঘের বুকে উড়ন্ত পাখির মতো বিমান বা হেলিকপ্টার পৃথিবীকে আরো কাছাকাছি এনে দিয়েছে।
শিল্প কর্মে বিজ্ঞান: প্রাচীনকাল থেকেই আমরা দেখতে পাই মিশরীয় ও গ্রীক শিল্পীরা জ্যামিতির ধারণা ব্যবহার করে নিখুঁত প্রতিমা ও স্থাপত্য নির্মাণ করেছেন। এই ধারা ধরেই এখন বায়ো আর্ট নামক এক নতুন শিল্প উদ্ভাবন হয়েছে , যেখানে জীবন্ত কোষ বা ডিএনএ দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের শিল্পকর্ম।
বিনোদনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান: বিনোদনের অঙ্গন বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় সূচনা হয়েছে এক নতুন যুগের। মুভি থিয়েটারে এখন পর্দায় ছবি দেখানোর পাশাপাশি বিজ্ঞান নিয়ে এসেছে স্পেশাল ইফেক্ট এর জাদু। আবার, ই- স্পোর্টস তৈরি করে দিয়েছে নতুন পেশা, নতুন জগৎ পৃথিবীজুড়ে লাখ লাখ দর্শককে। এছাড়াও থিম পার্কের মত অসাধারণ বিনোদনের জায়গা বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য কীর্তি।
বস্ত্র শিল্পে বিজ্ঞানের প্রয়োগ: আদিকাল থেকে মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি হলো বস্ত্র। বস্ত্র শিল্পে বিজ্ঞানের প্রয়োগ করে নাইলন, পলেস্টার, এপ্রিলিক, রেশম, সিল্ক, খাদি এর মত তন্তু, যা টেকসই ও সাশ্রয়ী এবং সুতির মতো আরামদায়ক ও শক্তিশালী তন্তু দিয়ে নানা ধরনের পোশাক উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে পোশাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এই সকল কাপড়ের উপর আবার বিভিন্ন শিল্পকর্ম স্থান পাচ্ছেন। এছাড়া ওয়াটারপ্রুফ কাপড়, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ফেব্রিক, স্মার্ট ফেব্রিক ইত্যাদি উদ্ভাবিত হয়েছে বিজ্ঞানের অসামান্য ভূমিকায়।
বিজ্ঞানের ধ্বংসরূপ: বিজ্ঞান মানুষের শরীর ও মনের সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত চলতে পারি না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিদ্যুৎ সংকট, যানবাহন সমস্যা, ভোগ্য পণ্যের অনটন প্রভৃতির কথা বলা যায়। এছাড়াও বিজ্ঞানের উচ্চতর প্রযুক্তির ব্যবহার করে মানুষ পারমাণবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমা, জীবাণু অস্ত্র তৈরি করে সভ্যতাকে হুমকির সম্মুখীন করে তুলেছে। তাই বলা যায়, বিজ্ঞান মানব সভ্যতাকে দিয়েছে বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ।
বিজ্ঞানের কল্যাণ: বিজ্ঞান আমাদের মৌলিক সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ এখন আরামদায়ক ও স্বস্তির জীবন যাপন করতে সক্ষম হচ্ছে। যেখানে বিশ্বের অধিকাংশ জনসংখ্যা খাদ্যাভাবের মোকাবেলায় হিমশিম খেত, সেখানে এখন প্রায় ৬০০ কোটি ৫০ হাজার মানুষের খাদ্যের অভাব হয় না। আবার বর্তমান আধুনিক সমাজ তৈরিতে বিজ্ঞানেরই মূল অবদান রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মত এক অসাধারণ প্রযুক্তি দান করেছে বিজ্ঞান, যা মানুষের কাজ অনেক সহজ ও দ্রুত করে দিয়েছে।
বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহার: বিজ্ঞানের কল্যাণ কর দিক থাকলেও এটি সব সময় সুসংবাদ নিয়ে আসে না। মানুষের জন্য ভালো দিক সামনে রেখে আবিষ্কারের পরও এর অপব্যবহারও রয়েছে। বর্তমান যুগে বেশিরভাগ তরুন সমাজ মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ক্ষতি হচ্ছে তাদের স্বাস্থ্য ও পড়াশোনা। এছাড়াও এখনকার যুদ্ধ আগেকার যুদ্ধে থেকে অনেক বেশি ভয়ংকর, শক্তিশালী ও ক্ষতিকর। এজন্য পারমাণবিকের মত ক্ষতিকর অস্ত্র তৈরি করা বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ডিভাইসে প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি হওয়া যাবে না। মোটকথা, বিজ্ঞানের অকল্যাণকর দিকগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, তবেই আমরা বিজ্ঞানের সুফল পুরোপুরিভাবে পাব।
বিজ্ঞানের ভাবনা: মানুষের মাথায় কাজ করে নতুন নতুন ভাবনা। বিজ্ঞানের কাজই হলো যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা। যুক্তিগ্রাহ্য মন নতুন নতুন চেতনার সঞ্চার করে। তাই তাই প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞানের ভাবনা, ব্যবহারে ও চিন্তায় উন্নততর জীবনের যুক্তিগ্রাহ্য স্বপ্ন দেখায়।
উপসংহার: দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান আমাদের জীবনে নিয়ে এসেছে আশীর্বাদ। আমরা যদি বিজ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ ও ব্যবহার করতে পারি তা আমাদের জন্য খারাপ কিছু নয় বরং সুফল বয়ে আনবে। আমরা যত বেশি বিজ্ঞান কে আমাদের জীবনে পজিটিভ ভাবে ব্যবহার করব তত বেশি আমরা আরো উন্নতি শিখরে পৌঁছাতে পারবো।
লেখকের মতামত
প্রিয় বন্ধুরা, দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনাটি নিয়ে আমাদের আজকের এই প্রবন্ধ। আমাদের জীবনে বিজ্ঞান যে কত বেশি জড়িয়ে রয়েছে তা আজকে রচনাটি পাঠ করলে পুরোপুরিভাবে অনুধাবন করতে পারি। আমি পয়েন্ট আকারে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনাটি মূল বিষয়বস্তু সহ আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ রচনাটি তোমরা যে কোন ক্লাসে পড়ার জন্য নোট হিসেবে নিতে পারবে।

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url