হাতিশুর গাছের উপকারিতা গুলো কি কি

হাতিশুর গাছের উপকারিতা গুলো কি কি তা হয়তো আমার অনেকেই জানি না। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য কতটুকু উপকারি তা আমাদের জানা উচিত। তাই হাতিশুর গাছের কার্যকর উপকারিতা গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের এই আর্টিকেলে।

হাতিশুর-গাছের-উপকারীতা

হাতিশুর গাছের উপকারিতা গুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটিকে আমরা বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগাতে পারি। সেজন্য হাতিশুর গাছের উপকারিতা গুলো কি কি এবং এটি আমাদের জন্য কতটুকু কার্যকর তা জানতে পারবেন আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে। পোস্ট সূচিপত্র: 

হাতিশুর গাছের উপকারিতা গুলো

প্রকৃতির ভাণ্ডারে এমন অনেক ঔষধি গাছ রয়েছে যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হাতিশুঁড় গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম Clerodendrum indicum) সেসব ভেষজ গাছের একটি, যা লোকজ চিকিৎসায় বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে।

হাতিশুর-গাছের-উপকারীতা

হাতিশুঁড় গাছকে অনেক সময় “গরীবের ইনহেলার” বলা হয়। কারণ শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি এবং সর্দি-কাশির মতো সমস্যায় এর পাতার রস ও শুকনো অংশ অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রাচীন চিকিৎসায় শ্বাসনালী পরিষ্কার ও শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করতে হাতিশুঁড়ের ব্যবহার প্রচলিত ছিল।

আরো পড়ুনঃ আলকুশি পাউডারের ১০টি উপকারিতা

হাতিশুঁড় গাছের বড় উপকারিতা হলো এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। যারা গ্যাস্ট্রিক, অম্বল বা পেটে গ্যাসের সমস্যায় ভুগেন, তারা হাতিশুঁড়ের পাতার রস বা ভেষজভাবে তৈরি ওষুধ গ্রহণ করলে আরাম পান। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ব্যথার মতো সমস্যায় এই গাছের নির্যাস কার্যকরভাবে কাজ করে।

হাতিশুঁড় গাছে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান, যা জ্বর এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। শরীরে জীবাণুর আক্রমণ কমাতে এর রস ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় ম্যালেরিয়া বা দীর্ঘস্থায়ী জ্বরের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

হাতিশুঁড় গাছ শরীরের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতেও সমান কার্যকর। বিশেষ করে বাত ব্যথা, গেঁটে বাত বা জয়েন্টের সমস্যায় এর পাতা ও মূল ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে থাকা প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক উপাদান ফোলা ও ব্যথা উপশমে কাজ করে। অনেক সময় বাহ্যিকভাবে পাতা বেটে ক্ষত লাগানো হয়।

হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে হাতিশুর গাছের উপকারিতা

হাঁপানি একটি দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, যা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ভোগাচ্ছে। শ্বাসনালীর প্রদাহ ও সংকোচনের কারণে রোগী শ্বাস নিতে কষ্ট পায়, কাশি, সাঁ সাঁ শব্দ ও বুকে চাপ অনুভব করে। আধুনিক চিকিৎসায় হাঁপানির জন্য ইনহেলার, ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

হাতিশুঁড় গাছের পাতায় রয়েছে প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক উপাদান, যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। হাঁপানি রোগীদের জন্য বড় সমস্যা হলো শ্বাসনালীর সংকোচন, ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নিয়মিত সঠিক মাত্রায় হাতিশুঁড় পাতার রস বা এর ভেষজ নির্যাস গ্রহণ করলে শ্বাসনালী প্রসারিত হয়।

পাতার পাশাপাশি হাতিশুঁড় গাছের মূল ও ডাঁটাও হাঁপানি রোগে কার্যকর ভূমিকা রাখে। মূল শুকিয়ে গুঁড়ো করে উষ্ণ পানিতে মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্ট ও কাশি কমে যায়। এই পানীয় ফুসফুসের ভেতরের জমে থাকা কফ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে হাতিশুঁড় গাছ তাৎক্ষণিক ফল দেয় না; বরং নিয়মিত ও সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এর উপকারিতা পাওয়া যায়। এ ভেষজ শরীরে ধীরে ধীরে কাজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যারা হাঁপানি রোগে ভোগেন তারা যদি দীর্ঘমেয়াদে হাতিশুঁড়ের রস, মূল বা ডাঁটার নির্যাস ব্যবহার করেন।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে হাতিশুর গাছের কার্যকারিতা

মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য হজম প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। খাবার সঠিকভাবে হজম না হলে দেহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে না এবং ধীরে ধীরে নানা জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভেষজ চিকিৎসায় হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য বহু উপাদান ব্যবহার হয়।

হাতিশুঁড় গাছের পাতায় এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে, যা পাকস্থলীর এনজাইম সক্রিয় করে এবং খাবার হজম সহজ করে। অনেক সময় ভারী খাবার খাওয়ার পর অম্বল, গ্যাস্ট্রিক বা বুকজ্বালা দেখা দেয়, তখন হাতিশুঁড় পাতার রস উপকারে আসে।

হাতিশুঁড় গাছ শুধু অম্বল নয়, বরং গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণেও সমান কার্যকর। যাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা বা খাবার হজম হতে দেরি হয়, তারা হাতিশুঁড়ের নির্যাস খেলে স্বস্তি পান। এছাড়া এই ভেষজ পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও অনেকটাই কমে যায়।

আরো পড়ুনঃ আলকুশি বীজ খাওয়ার ১৮ উপকারিতা

হজম শক্তি কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুধাও কমে যায়। হাতিশুঁড় গাছ ক্ষুধা বাড়াতে একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। ভেষজ চিকিৎসায় শিশু বা বৃদ্ধদের ক্ষুধামন্দা দূর করতে হাতিশুঁড় পাতার রস বা মূলের নির্যাস খাওয়ানো হয়। এতে পাকস্থলীর কার্যকারিতা সক্রিয় হয়।

হজম শক্তির সমস্যা আমাদের জন্য বড় সমস্যা। আমাদের অনেকের হজম শক্তি কম থাকে এতে কম খাবার খেলেও সহজে হজম হতে চাই না। এক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। এ সমস্যাগুলো বেঁচে থাকার জন্য আমরা এটি ব্যবহার করব।

কৃমিনাশক হিসেবে হাতিশুর গাছের ব্যবহার

মানবদেহে কৃমি একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। হজমের সমস্যা, দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা ও রক্তশূন্যতার মতো নানা জটিলতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় কৃমি। যদিও বাজারে নানা ধরনের কৃমিনাশক ওষুধ পাওয়া যায়।

হাতিশুঁড় পাতায় থাকা ভেষজ উপাদান অন্ত্রের ভেতরের কৃমিকে দুর্বল করে এবং ধীরে ধীরে বের করে দেয়। শিশুদের কৃমির সমস্যা নিরাময়ে এই পাতার রস সামান্য মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও পাতার রস বা সিদ্ধ পানি নিয়মিত খেলে কৃমি ধ্বংস হয়।

পাতার পাশাপাশি হাতিশুঁড় গাছের মূল ও ডাঁটারও কৃমিনাশক গুণ রয়েছে। মূল শুকিয়ে গুঁড়ো করে খেলে অন্ত্র পরিষ্কার হয় এবং কৃমি সহজে বের হয়ে যায়। ডাঁটা সিদ্ধ করে পানি খাওয়ানোও কৃমিনাশক হিসেবে কার্যকর। নিয়মিত এভাবে ব্যবহার করলে শরীরের ক্ষতিকর জীবাণু ও কৃমি ধ্বংস হয়।

শরীর থেকে কৃমি দূর করতে একবার ব্যবহার করলেই যথেষ্ট নয়। নিয়মিত সঠিক মাত্রায় হাতিশুঁড় ব্যবহার করতে হয়। এটি শুধু কৃমি দূর করেই থেমে থাকে না, বরং অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে এবং ভবিষ্যতে নতুন করে কৃমি জন্মানোর প্রবণতা কমায়। শিশুদের জন্য এটি একটি নিরাপদ সমাধান।

এই কিরমি নাশক সমস্যা শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। তবে বড়দের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু এই সমস্যা দেখা দিলে নিজের মধ্যে খুবই একটা বিরক্তি কর ভাব আসে। এই জন্য এই সমস্যা থেকে নিরুপায় হওয়ার জন্য আমরা এ ওষুধগুলো ব্যবহার করব।

লিভার পরিষ্কার করতে হাতিশুর গাছের উপকারীতা

লিভার মানবদেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শরীরকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্ত রাখে, খাবার হজমে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবার, অতিরিক্ত তেল-ঝাল, ধূমপান, মদ্যপান কিংবা অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে লিভার দুর্বল হয়ে পড়ে।

হাতিশুঁড় গাছের পাতায় রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা লিভার থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। নিয়মিত পরিমাণমতো পাতার রস গ্রহণ করলে লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং রক্ত পরিষ্কার হয়। বিশেষ করে যারা নিয়মিত ভাজা-ভাজি, তেলযুক্ত বা ভারী খাবার খেয়ে থাকেন।

লিভার প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন একটি সাধারণ সমস্যা, যা ভাইরাস বা অতিরিক্ত বিষাক্ত খাবারের কারণে হতে পারে। হাতিশুঁড় গাছের মূল প্রদাহনাশক গুণাগুণে সমৃদ্ধ। এর নির্যাস পান করলে লিভারের প্রদাহ ধীরে ধীরে কমে যায়। পাশাপাশি লিভারের কোষকে শক্তিশালী করে, ফলে সংক্রমণ প্রতিরোধে করে।

লোকজ চিকিৎসায় হাতিশুঁড় গাছ হেপাটাইটিস ও লিভারজনিত দুর্বলতায়ও ব্যবহৃত হয়। মূল শুকিয়ে গুঁড়ো করে পানি বা মধুর সঙ্গে খেলে লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ে। এতে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় এবং রক্তশূন্যতা হ্রাস পায়। নিয়মিত ও পরিমিত ব্যবহারে লিভারের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।

আমাদের দেহে সাধারণত এ সকল সমস্যাগুলো থাকে। বিশেষ করে লিভারের সমস্যা এগুলো কম বেশি থাকেই। তবে শরীরে এই সমস্যাগুলো থাকলে চলবে না এগুলোকে পরিত্রাণ করতে হবে আর এটির জন্য আমরা হাতিশুর গাছ ব্যবহার করব। 

গ্যাস্টিক সমস্যা দুর করতে হাতিশুর গাছ

গ্যাস্ট্রিক বা অম্বল বর্তমান যুগে একটি বহুল প্রচলিত সমস্যা, যা প্রায় সকল বয়সী মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। অনিয়মিত খাবার খাওয়া, তেল-ঝাল জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত মশলা, ধূমপান কিংবা মানসিক চাপের কারণে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দেখা দেয়।

গ্যাস্ট্রিকের ফলে বুকজ্বালা, পেটে ব্যথা, ঢেকুর, বমি বমি ভাবসহ নানা অস্বস্তি তৈরি হয়। আধুনিক ওষুধ এ সমস্যার সমাধান করে ঠিকই, তবে ভেষজ চিকিৎসায় হাতিশুঁড় গাছ (Clerodendrum indicum) গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণে একটি নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক সমাধান।

হাতিশুঁড় গাছের পাতায় রয়েছে প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান যা পাকস্থলীর অম্লতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত সামান্য পরিমাণ পাতার রস খেলে বুকজ্বালা কমে যায় এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। লোকজ চিকিৎসায় পেটের জ্বালাভাব ও গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা দূর করতে হাতিশুঁড় পাতার রস খেতে হবে। 

গ্যাস্ট্রিক সমস্যার অন্যতম প্রধান উপসর্গ হলো পেট ফাঁপা ও অম্বল। হাতিশুঁড় গাছ এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকর। এর মূল ও ডাঁটার নির্যাস পান করলে পেটে জমে থাকা গ্যাস বের হয়ে যায়। এছাড়া হজমে সহায়তা করে বলে খাবার হজম হতে সময় কম লাগে এবং অম্বল কমে যায়।

গ্যাস্ট্রিক সমস্যার মূল কারণ অনেক সময় দুর্বল হজমশক্তি। হাতিশুঁড় গাছ হজমশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। এটি পাকস্থলীর এনজাইম সক্রিয় করে এবং খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে। ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার পুনরাবৃত্তি কমে এবং দীর্ঘমেয়াদে পাকস্থলী সুস্থ থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে হাতিশুর গাছ

মানবদেহের সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি হলো শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও নানা ধরনের জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক সুরক্ষা তৈরি করে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, দূষণ, মানসিক চাপ এবং অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে রোগ বাড়ে।

হাতিশুঁড় পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও ভেষজ উপাদান যা শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে। এটি রক্ত পরিষ্কার করে এবং শরীরের  বিষাক্ত উপাদান দূর করে দেয়। নিয়মিত পরিমাণমতো পাতার রস পান করলে শরীর সহজে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।

হাতিশুঁড় গাছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল গুণাগুণ রয়েছে। এটি শরীরে জীবাণুর আক্রমণ কমায় এবং বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফুসফুস, গলা ও পেটের সংক্রমণ দূর করতে হাতিশুঁড়ের নির্যাস কার্যকরভাবে কাজ করে।

আরো পড়ুনঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁচা আমলকির উপকারিতা

হাতিশুঁড় গাছ শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় না, বরং শরীরকে সামগ্রিকভাবে শক্তিশালী করে। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, লিভার পরিষ্কার রাখে এবং রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীর রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত থাকে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হাতিশুঁড় গাছ একটি অনন্য প্রাকৃতিক উপাদান। এর পাতা, ডাঁটা ও মূল শরীরকে জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং ভেতর থেকে শক্তি যোগায়। আধুনিক ওষুধের পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভেষজ চিকিৎসায় হাতিশুঁড় গাছকে নিয়মিত ব্যবহার করব।

এলার্জি সমস্যা দূর করে হাতিশুর গাছ

অ্যালার্জি একটি সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা, যা অনেক মানুষের জীবনকে প্রতিদিনের কাজকর্মে বাধাগ্রস্ত করে। ধুলোবালি, পরাগরেণু, খাবার, ওষুধ কিংবা আবহাওয়ার কারণে অ্যালার্জি হতে পারে। এর ফলে হাঁচি, কাশি, চোখ চুলকানো, ত্বকে ফুসকুড়ি এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।

হাতিশুর-গাছের-উপকারীতা

হাতিশুঁড় পাতায় রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক উপাদান, যা শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত পাতার রস অল্প পরিমাণে পান করলে হাঁচি-কাশি কমে এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার থাকে। অনেক লোকজ চিকিৎসায় দেখা যায়, এসব সমস্যা।

হাতিশুঁড় গাছ ত্বকের অ্যালার্জি দূর করতেও সমান কার্যকর। ফুসকুড়ি, চুলকানি কিংবা লালচে দাগ হলে পাতার বাটা অংশ আক্রান্ত স্থানে লাগানো হয়। এতে ত্বকের প্রদাহ কমে এবং দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। এর প্রাকৃতিক উপাদান ত্বকের ভেতরের জীবাণু ধ্বংস করে এবং ত্বককে সুস্থ রাখে।

অনেক সময় অ্যালার্জি শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বুক চেপে ধরার মতো সমস্যা সৃষ্টি করে। হাতিশুঁড় গাছ ফুসফুস পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং শ্বাসজনিত অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। মূল বা ডাঁটা সিদ্ধ করে তার পানি খেলে কাশি ও সর্দি কমে যায়। অ্যালার্জির কারণে সৃষ্ট অস্বস্তি হ্রাস পায়।

সর্বোপরি, হাতিশুঁড় গাছ অ্যালার্জি সমস্যা দূর করার একটি কার্যকর ভেষজ সমাধান। এর পাতা, ডাঁটা ও মূল শরীরের ভেতরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বকের অ্যালার্জি কমায় এবং শ্বাসযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। প্রাকৃতিকভাবে অ্যালার্জি নিয়মিত হাতিশুঁড় গাছ ব্যবহার করতে হবে।

মাথাব্যথা দূর করতে হাতিশুর গাছের ব্যবহার

মাথাব্যথা বা সেরির সমস্যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। এটি অতিরিক্ত চাপ, মানসিক উদ্বেগ, অনিয়মিত ঘুম, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বা পরিবেশগত কারণের কারণে হতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা ও ওষুধ সহায়তা দিতে পারে, তবে প্রাকৃতিক ভেষজ উপায়েও মাথাব্যথা উপশম হয়।

হাতিশুঁড় গাছের পাতায় রয়েছে প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হলো মস্তিষ্কের রক্তনালীতে ব্যথাজনক রাসায়নিকের সঞ্চয়। পাতার রস বা পাতার নির্যাস পান করলে এটি রক্তনালী প্রশমিত করে এবং মস্তিষ্কের ব্যথা কমায়।

আরো পড়ুনঃ ভেষজ উদ্ভিদ ভুই আমলা খাওয়ার ২০টি উপকারিতা

হাতিশুঁড়ের ডাঁটা ও মূলও মাথাব্যথা কমাতে সহায়ক। মূল বা ডাঁটা সিদ্ধ করে পানি পান করলে শরীরে উত্তেজনা কমে এবং মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন ঠিক থাকে। এটি মাথার চাপ ও স্ট্রেস দূর করতে সাহায্য করে, ফলে মাথাব্যথা প্রাকৃতিকভাবে উপশম পায়।

মাথাব্যথার সঙ্গে মানসিক চাপ ও উদ্বেগের সম্পর্ক গভীর। হাতিশুঁড় গাছের নির্যাস স্নায়ুতন্ত্রকে প্রশমিত করে এবং মানসিক চাপ হ্রাসে সাহায্য করে। নিয়মিত পরিমাণমতো ব্যবহার করলে ঘনঘন মাথাব্যথা ও চাপজনিত সমস্যা কমে যায়।

সব মিলিয়ে, হাতিশুঁড় গাছ মাথাব্যথা দূর করার একটি কার্যকর প্রাকৃতিক ভেষজ। এর পাতা, ডাঁটা ও মূল মাথার ব্যথা উপশমে সাহায্য করে, রক্তনালী প্রশমিত করে এবং মানসিক চাপ কমায়। তবে যেকোনো ভেষজ উপাদান ব্যবহারের আগে অভিজ্ঞ ভেষজ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠক, হাতিশুর গাছের উপকারীতা যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক ঔষধি চিকিৎসা গুলো চলে আসছে। এগুলো বেশিরভাগ আগেকার মানুষ কার্যকর করতো এখনকার মানুষ করে না এমনটা নয়। হাতিশুর গাছের উপকারিতা গুলো কি কি এই সকল কিছু জানতে পারবেন এর এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে।

এছাড়াও কি কি সমস্যায় হাতিশুর গাছের উপকারিতা রয়েছে। হাতিশুর গাছ আমাদের শরীরের রোগ নিরাময় করার জন্য কতটুকু কার্যকর এ সকল কিছু আমরা জানতে পেরেছি। তাই এরকম আরো নিয়মিত পোস্ট পেতে এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

comment url