মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ গুলো - ওযু ভঙ্গের কারণ ১৯টি

মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে জানতে পারবেন। যেসব কারণে নারীদের ওযু ভঙ্গ হয় সে সম্পর্কে একজন মুসলমান নারীর জানা জরুরী। সাথে জানবেন, ওযু ভঙ্গের কারণ ১৯টি সম্পর্কে।
মহিলাদের-ওযু-ভঙ্গের-কারণ

ওযু করার পর বিভিন্ন শারীরিক ও প্রাকৃতিক কারণে একজন মহিলার ওযু ভঙ্গ হতে পারে। অজু ভঙ্গের কারণ গুলো জানা না থাকলে যে কারণে অজু করা হয়েছিল তা শুদ্ধ হবে না। যে কোনো ফরজ কাজ যেমনঃ নামাজ আদায় অথবা কোরআন তেলোয়াত করার আগে নারী ও পুরুষের ওযু করে নেওয়া বাধ্যতামূলক।

ইসলামে ওযুকে পবিত্রতার অংশ বলা হয়। ওযু করার মাধ্যমে আমাদের শরীর পাক পবিত্র হয়। আর পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। এজন্য ফরজ আদায় করার আগে ওযু করা অবশ্য কর্তব্য। কোন কারণে ওযু ভেঙ্গে গেলে নতুন করে ওযু করে নেওয়া আবশ্যক। পোস্ট সূচীপত্রঃ

নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ ও ওযু ভঙ্গের কারণ ১৯টি সম্পর্কে বিস্তারিত।

মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ

মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ বিভিন্ন হতে পারে। এটা হতে পারে ওযু করার পর বিশেষ কোনো কারণে ওযু ভঙ্গ হয় বা শারীরিক কিছু পরিবর্তনের কারণে ওযু ভঙ্গ হতে পারে। ইসলামে নারীদের পাক-পবিত্র থাকার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছে।

আরো পড়ুনঃ ইশরাক নামাজ পড়ার আরবি নিয়ত ও নিয়ম

তাই একজন মহিলার নিজের শরীরকে নাপাক অবস্থা থেকে পাক পবিত্র থাকার জন্য ওযু ভাঙ্গার কারণ গুলো জানা থাকলে সহজে নিজেকে সহিশুদ্ধ রাখতে পারে।

তাই কি কি কারনে ওযু ভেঙ্গে যেতে পারে, কারণগুলো জানা থাকলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ওযু ভেঙ্গেছে কিনা। এবং সে মোতাবেক আপনি পুনরায় ওযু করে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

নিচে জেনে নিন মহিলাদের ওযু ভঙ্গের বিশেষ কয়েকটি কারণ সম্পর্কে বিস্তারিতঃ

ফরজ গোসল প্রয়োজন হলে

স্বামী স্ত্রীর মিলনের পর যেহেতু মহিলাদের শরীর অশুদ্ধ থাকে বা পবিত্রতা হারায় তাই এ সময় ওযু ভঙ্গ হয়। অর্থাৎ গোসল করা ফরজ হয়ে যায় এরকম কিছু ঘটলে ওযু ভঙ্গ হয়।

মল-মুত্র ত্যাগ করার পর

ওযু করার পর পেশাব বা পায়খানা রাস্তা দিয়ে মল -মূত্র বা অন্য কোন কিছু বের হলে ওযু ভঙ্গ হয়। তাছাড়া মল মুত্র ত্যাগ করার পর ওযু ভঙ্গ হয় এবং এরপর ওযু করে নেওয়া ফরজ।

ওযু করার পর শরীরের অন্যান্য যে কোন অঙ্গ থেকে নাপাক কোন কিছু বের হলেও ওযু ভঙ্গ হয়।

মাসিক চলাকালীন সময়ে

মহিলাদের মাসিক চলাকালীন সময়ে ওযু ভঙ্গ হয়। মহিলাদের মাসিকের মাধ্যমে যেহেতু দূষিত রক্ত বের হয় এ কারণে শরীরে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ওই সময় নাপাক অবস্থায় থাকে। মাসিক চলাকালীন প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত অজু ভঙ্গ হয়।

এই সময় যে কোন ফরজ কাজ যেমনঃ নামাজ, রোজা রাখা, কোরআন স্পর্শ করে তেলাওয়াত করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

প্রসব পরবর্তী সময়

কোন মহিলা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর বা প্রসব পরবর্তী যে কয়দিন মহিলাদের রক্ত যাবে সে কয়দিন ওযু ভঙ্গ হয়। একে ইসলামিক ভাষায় 'নিফাস' বলে। রক্ত বের হওয়ার এই কয়দিন শরীর পাক পবিত্র না থাকায় অজুত ভঙ্গ থাকে, তাই এই সময় নামাজ, রোজা পালন করা নিষিদ্ধ।

গভীর ঘুমিয়ে গেলে

ওযু থাকা অবস্থায় ঘুমিয়ে গেলে সেটা হতে পারে বালিশে মাথা দিয়ে, চিত হয়ে, হেলান দিয়ে বা ঠেস দিয়ে তাহলে ওযু ভঙ্গ হয়। যেহেতু গভীর ঘুমে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কার্যকলাপ নিষ্ক্রিয় থাকে বা বন্ধ থাকে এবং কিছু প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটে, এজন্য এই সময় ওযু ভঙ্গ হয়। ঘুমের পর নতুন করে ওযু করে নিতে হবে।

জ্ঞান হারিয়ে ফেললে

ওযু থাকা অবস্থায় কোন নারী যদি জ্ঞান বা চেতনা হারিয়ে ফেলেন তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হবে। সজ্ঞানে ফিরে আসার পর পুনরায় ওযু করে নিতে হবে।

লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে

ওযু থাকা অবস্থায় কাপড় ব্যতীত সরাসরি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হতে পারে। ইসলামে মহিলাদের পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেছে। তাই এই ধরনের কোন কাজ করার পর ওযু ভঙ্গ হয় এবং পরবর্তীতে ওযু করে নেওয়া বাধ্যতামূলক।

উম্মে হাবিবা (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, " যে ব্যক্তি (পুরুষ বা মহিলা) তার লিঙ্গ স্পর্শ করল (তার অজু ভঙ্গ হয়ে গেল, তাই) সে যেন আবার অজু করে নেয়।" ইবনে মাজাহঃ ৪৮১

বমি করলে

ওযু করার পর বা অজু থাকা অবস্থায় মুখ ভরে বমি করলে ওযু ভঙ্গ হয়। তাই সালাত আদায় করতে হলে পুনরায় ওযু করে নিতে হবে।

তরল নির্গত হলে

অনেক সময় অসাবধানতা বা অবহেলার কারণে মহিলাদের পায়খানা ও প্রস্রাব করার পর শুদ্ধরূপে পরিষ্কার না করলে ওযু ভঙ্গ হয়। এছাড়া মহিলাদের প্রস্রাবের স্থান থেকে বিশেষ কিছু স্রাব নির্গত হলেও ওযু ভঙ্গ হয়। তাই পায়খানা ও প্রস্রাব করার পর নির্দিষ্ট জায়গা শুদ্ধভাবে পরিষ্কার করা জরুরী।

রক্ত ও পুঁজ বের হলে

শরীরে কোন জায়গায় আঘাতের ফলে যদি  ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত বা পুঁজ বের হয় তাহলে ওযু ভঙ্গ হয়। তাই শরীর পবিত্র করতে ওযু করে নেওয়া আবশ্যক।

অস্বাভাবিক শারীরিক পরিস্থিতির কারণে

মহিলাদের অনেক সময় অস্বাভাবিক কিছু শারীরিক পরিস্থিতির কারণে ওযু ভঙ্গ হয়। এই সময় শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যদি যদি শুদ্ধ না থাকে তাহলে ওযু ভঙ্গ হয় এবং পরবর্তীতে অজু করে নিতে হবে।

থুথুর সাথে রক্ত গেলে

থুতু ফেলার পর থুতুর সঙ্গে যদি সমপরিমাণ বা বেশি রক্ত বা রক্তের দলা বের হয় তাহলে ওযু ভঙ্গ হয়। এরপর অজু করে দেওয়া আবশ্যক।

গোপনাঙ্গ পরিষ্কার না রাখলে

শরীরের বিভিন্ন গোপন স্থানে অবাঞ্চিত লোম ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী নিয়ম মাফিক পরিষ্কার না রাখলে ওযু ভঙ্গ হয়। তাই শরীরের শুদ্ধতার জন্য নিয়মিত অবাঞ্ছিত লোম পরিস্কার করে অজু করতে হবে।

নামাজে উচ্চস্বরে হাসলে

নামাজের সময় উচ্চস্বরে হাসলে ওযু ও নামাজ ভেঙে যেতে পারে। যদিও এই হাদিস নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। কোন কোন হাদীসে নামাজ রত অবস্থায় উচ্চস্বরে হাসলে ওযু ভঙ্গ হয় আবার কোন কোন হাদিসে এসেছে অজু ভঙ্গ হয় না।

মহিলাদের ওযু করার নিয়ম

মহিলাদের জন্য ইসলামী নিয়ম মোতাবেক ওযু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওযু করার মাধ্যমে একজন নারী শারীরিক ও আত্মিকভাবে পবিত্রতা লাভ করে। তাই ওযু করার সময় সঠিক নিয়ম পালন করা অপরিহার্য।

পুরুষ ও মহিলাদের ওযু করার নিয়ম প্রায় একই হলেও, কিছু ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। পুরুষের চেয়ে নারীদের যেহেতু শারীরিক গঠন আলাদা তাই ওযু করার ক্ষেত্রেও মহিলাদের কিছু আলাদা নিয়ম অনুসরণ করা কর্তব্য। নিচে মহিলাদের শুদ্ধভাবে ওযু করার নিয়ম গুলো দেখে নিনঃ

  • ওযু করার আগে দুই হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং দুই হাতের কব্জি এবং আঙ্গুলের ফাঁকগুলোতে পানি দিতে হবে।
  • গড়গড়া করে কুলি করতে হবে
  • নাকে পানি দিতে হবে
  • পুরো মুখ মন্ডল ভালোভাবে পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে
  • দুই হাতের কনুই পর্যন্ত ভালোভাবে পানি দিতে হবে
  • সঠিক নিয়মে মাথা মাসেহ করতে হবে
  • দুই পা পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে।
এটা হল মহিলাদের ওযু করার সাধারণ নিয়ম। যে কোন ফরজ আদায় করার আগে যেমনঃ নামাজ বা কোরআন তেলাওয়াত শুরু করার আগে ওযু করে নেওয়া অবশ্য পালনীয়।

তবে মহিলাদের মাসিক চলাকালীন ও সন্তান জন্ম দেওয়ার পরবর্তী সময় ওযু করার আলাদা নিয়ম রয়েছে। এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে জেনে তারপর ওযু করে নিতে হবে।

মহিলাদের ওযু করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। যেমনঃ
  • মহিলাদের বিশেষ অঙ্গ যেন পরিষ্কার ও লোম মুক্ত থাকে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ নিয়মিত বিশেষ অঙ্গের লোম পরিষ্কার করতে হবে।
  • ওযু করার আগে মহিলাদের মুখমন্ডল যদি মেকআপ দ্বারা আবৃত থাকে তাহলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • মহিলাদের নাকে ও কানে কোন গয়না পরা থাকলে, সেখানে পর্যন্ত যেন পানি পৌঁছায় তা বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
  • ওযু করার সঠিক নিয়ম মেনে তারপর ওযু করতে হবে। অর্থাৎ ওযুর কোন অংশ বাদ দেওয়া যাবে না।

ওযু ভঙ্গের কারণ ১৯ টি

ওযু ভঙ্গের কারণ ১৯ টি সম্পর্কে আর্টিকেলের এই অংশে জেনে নিন। কি কি কারনে ওযু ভঙ্গ হয় তা জানা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওযু ভাঙার কারণ গুলো জানা থাকলে যেকোনো ফরজ আদায়ের আগে নাপাক থেকে পাক পবিত্র হওয়া সম্ভব।

নামাজ আদায়ের আগে ওযু করে নেওয়া ফরজ। কোন কোন সময় ওযু করার পর ওযু নানা কারণে ভঙ্গ হতে পারে আবার কোন কোন সময় অসাবধানতা বসত ওযু ভঙ্গ হতে পারে। এজন্য আপনি যদি জানেন ওযু ভঙ্গের কারণ গুলো তাহলে পরবর্তীতে আপনি ওযু করে নিতে পারবেন।

যদিও ওযু ভঙ্গের সাধারণ কারণ ৭টি উল্লেখ রয়েছে, তবে আরো কিছু বিশেষ কারণে ওযু ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে। নিচে ওযু ভঙ্গ হওয়ার দলিল সহ মৌলিক ৭টি কারণ ও আরো বিশেষ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলোঃ

পেশাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বের হলে

প্রসাব পায়খানা রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে ওযু ভঙ্গ হয়। যেমনঃ পস্রাব, পায়খানা বা বায়ু পোকা, বীর্য, মজি ইত্যাদি। (হেদায়া, হাদিসঃ ১/৭), (আবু দাউদঃ ২০৬)।

পবিত্র কোরআনের আল্লাহ তাআলা বলেন," যদি তোমরা অপবিত্র হও, তবে পুরো শরীর পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন থাকো বা প্রবাসে থাকো অথবা প্রস্রাব পায়খানা সেরে আসো এবং তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো, তবে যদি পানি না পাও, তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও।

অর্থাৎ তোমাদের নিজ মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে নাও। আল্লাহ তোমাদের অসুবিধায় ফেলতে চান না কিন্তু তোমাদের পবিত্র রাখতে চান, এবং তোমাদের প্রতি যেও নেয়ামত তা পরিপূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা মায়িদা, আয়াতঃ ০৬)

রক্ত ও পুঁজ বের হলে

শরীরে কোন স্থান থেকে রক্ত, পুঁজ ও পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে ওযু ভঙ্গ হয়। (হেদায়া, হাদিসঃ ১/১০) তাই পরবর্তীতে ওযু করে নিতে হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১২২১)

এ বিষয়ে এক হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা) এর নাক দিয়ে যখন রক্ত ঝরতো, তখন তিনি অজু করে নিতেন।" মুয়াত্তা মালিক, হাদিসঃ ১১০

থুতুর সঙ্গে রক্ত গেলে

থুতুর সঙ্গে রক্তের পরিমাণ যদি সমান বা বেশি হয় তাহলে ওযু ভঙ্গ হয়। এ সময় নতুন করে অজু করে নেওয়া আবশ্যক।( মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদিসঃ ১৩৩০)।

এ বিষয়ে হাসান বসরী (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি তার থুতুতে রক্ত দেখল কিন্তু রক্তের পরিমাণ খুব বেশি না তাহলে তার পুনরায় ওযু করা আবশ্যক নয়।

মুখ ভরে বমি করলে

ওযু করার পর মুখ ভর্তি করে বমি করলে ওযু ভঙ্গ হয়। এজন্য পরবর্তীতে ওযু করে নেওয়া ফরজ। আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, কোন ব্যক্তির মুখ ভরে বমি হয় বা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে বা সহবাসের আগে সাদা পানি বের হয় (মজি), সে যেন পুনরায় ওযু করে নেয়। ইবনে মাজাহ , হাদিসঃ১২২১

চিৎ বা কাত হয়ে ঘুমালে

চিত হয়ে বা কাত হয়ে শুয়ে গভীর ঘুম ওযু ভঙ্গের কারণ। কারণে ঘুমের সময় শরীর ঢিলা হয়ে যায় যে কারণে বাতকর্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে অবশ্যই পরে অজু করে নিতে হবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিসঃ ২৩১৫)

এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন ব্যক্তি সেজদা দেওয়া অবস্থায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হয় না, তবে চিত হয়ে শুয়ে ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয়, কারণ চিৎ বা কাত হয়ে ঘুমালে শরীর ঢিলা হয়ে যায়, যা বাতকর্ম হওয়ার কারণ হতে পারে। আবু দাউদ, হাদিসঃ ২০২।

বিবেক বুদ্ধি লোক পেলে

নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের বিবেক বুদ্ধি লোপ পাওয়া এমন হলে ওযু ভঙ্গ হয়। যেমনঃ মাতাল হওয়া অথবা পাগল হলে বা বিশেষ কোনো ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় ওযু ভঙ্গ হয়।

গোসল করা ফরজ হলে

যেসব কারণে গোসল করা ফরজ হয় সেসব কারণ ঘটলে ওযু ভঙ্গ হয়। পরবর্তীতে অবশ্যই ওযু করে পাক পবিত্র হতে হবে। আবার নারী স্পর্শের কারণে উত্তেজনার বসত যদি কোন কিছু বের হয় তাহলে ওযু ভঙ্গ হয়।

চেতনা হারালে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে

বেহুশ বা অজ্ঞান হয়ে গেলে ওযু ভঙ্গ হয়। হাদিসে এসেছে, আবার কোন ব্যক্তি পাগল থেকে সুস্থ হলে নামাজের আগে অবশ্যই অজু করে নিতে হবে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিসঃ ৪৯৩), (তিরমিজিঃ ৯৬)

লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে

কাপড় ব্যতীত লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে সরাসরি পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হয়। যদিও এই বিষয়ে দ্বিমত হাদিস রয়েছে।

বুশরা বিনতে সাফায়াত (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করল( তার ওযু ভঙ্গ হলো বা ছুটে গেল, অতএব) সে যেন আবার অজু করে নেয়।" আবু দাউদঃ ১৮১

আবু হুরায়রা(রা) থেকে বর্ণিত অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যদি তোমাদের মধ্যে কোন নারী বা পুরুষ তার হাত দ্বারা কাপড়ের আবরণ ব্যতীত সরাসরি তার লিঙ্গ স্পর্শ করে তবে তাকে আবার ওযু করে নিতে হবে।" ইবনে হিব্বানঃ ২০১

যেহেতু বেশিরভাগ হাদিসে সরাসরি লিঙ্গ স্পর্শ করা ওযু ভঙ্গের কারণ হিসেবে বর্ণিত, তাই লিঙ্গ স্পর্শ করা ওযু ভঙ্গের কারণ হিসেবে ধরে নিয়ে পুনরায় ওযু করে নিতে হবে।

উটের গোশত ভক্ষণ করলে

উটের গোশত খেলে ওযু ভঙ্গ হয় এবং পরবর্তীতে ওযু করে নিতে হবে।

জাবের বিন সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে কোন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা) কে জিজ্ঞাসা করেছেন, উটের মাংস খেলে ওযু ভঙ্গ হয় কিনা? রাসূলুল্লাহ (সা) উত্তরে বলেছেন, হ্যাঁ উটের মাংস খেলে ওযু ভঙ্গ , হয় তাই পুনরায় অজু করো।"

উচ্চস্বরে হাসলে ওযু ভঙ্গ হয়

নামাজ আদায়রত অবস্থায় উচ্চস্বরে হাসলে ওযু ও নামাজ দুই ভঙ্গ হয়। এ অবস্থায় পুনরায় ওযু ও নামাজ আদায় করতে হবে. (যদিও নামাজে উচ্চস্বরে হাসলে ওযু ভঙ্গ হয় কিনা এ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে)

অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলছেন, কোন ব্যক্তি নামাজরত অবস্থায় উচ্চস্বরে হাসলে, সে ব্যক্তির ওযু ও নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে। সুনানে দারা কুতনি, হাদিসঃ ৬১২

টাখনুর নিচে কাপড় পড়লে

পুরুষদের টাখনুর নিচে জামা কাপড় থাকলে ওযু ভঙ্গ হয়। যদিও এই ব্যাপারেও দ্বিমত রয়েছে। কারণ টাখনুর নিচে কাপড় পড়া গুনার কাজ হলেও ওযু নষ্ট হয় কিনা সে সম্পর্কে বর্ণিত হাদিস দুর্বল।

ওযু মাকরুহ হওয়ার কারণ

বিভিন্ন কারণে ওযু মাকরূহ হতে পারে। নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত বা অন্য যে কোনো কারণে আপনি যদি শুদ্ধভাবে ওযু করতে চান, তাহলে অজু মাকরুহ হওয়ার কারণগুলো জানা জরুরী। প্রত্যেক মুসলমানের তাই অজু মাক্রুহ হওয়ার কারণগুলো জানা প্রয়োজন।

আরো পড়ুনঃ বিয়ের জন্য ইস্তেখারা নামাজ পড়ার নিয়ম

কারণ ওযু করার বিশেষ কিছু নিয়ম ও পদ্ধতি আছে। আপনি যদি ওযু করার সময় এই সকল নিয়ম না মানেন তাহলে আপনার ওযু হবে ঠিকই তবে তা মাকরুহ হয়ে যাবে। আপনার ওযু যেন শরীয়া অনুযায়ী অপছন্দীয় বা মাক্রুহ না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখা বিশেষ জরুরি।

নিচের আলোচনা থেকে ওযু মাকরুহ হওয়ার কারণগুলো জেনে নিন:

  • ওযু করার সময় ধারাবাহিকতা না রাখলে অজু মাকরুহ হয়
  • নোংরা স্থানে বসে ওযু করলে ওযু মাকরূহ হয়
  • অজু করার সময় অযথা বেশি পানি নষ্ট করলে ওযু মাকরুহ হয়
  • অজু করা অবস্থায় সাংসারিক বা জাগতিক কথাবার্তা বললে, তবে বিশেষ প্রয়োজনে দু একটি কথা বলা যাবে।
  • অজু করার সময় নাকে মুখে জোরে পানি দিলে ওযু  মাকরুহ হয়
  • মুখে পানি দেওয়ার সময় সর সর শব্দ বের হলে ওযু মাকরুহ হয়
  • অজু করার অঙ্গ গুলো একবার ধুয়েই অজু সেরে ফেলা বা তিনবারের বেশি ধোয়া। এতে ওযু  মাকরুহ হবে। তবে বিশেষ কোন কারণবশত এমন করলে অজু মাকরূহ হবে না।
  • প্রথমে বাম হাত বা বাম পা ধোয়া, এতে ওজু মাকরুব হবে
  • অজু করার সময় ডান হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করা, এতে ওযু মাকরুহ হয়ে যাবে।

ছবি দেখলে কি ওযু ভঙ্গ হয়

ছবি দেখলে কি ওযু ভঙ্গ হয় এ সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। দেখুন, ওযু ভঙ্গ হওয়ার কারণ ও মাকরুহ নিয়ে উপরে আলোচনা করেছি।

ওযু করার পর বা ওযু থাকা অবস্থায় কোন প্রাণীর ছবি বা যে কোন ছবি দেখলে ও আয়না দেখলে ওযু ভঙ্গ হয় না। এমনকি আপনি টিভিতে কোন খারাপ বা অশ্লীল ছবি দেখলেও ওযু ভঙ্গ হবে না। তবে এক্ষেত্রে গুনাগার হবেন।

তাই এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

মাথায় কাপড় না দিলে কি ওযু ভেঙে যায়

মাথায় কাপড় না দিলে কি ওযু ভেঙ্গে যায় এই সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। মাথায় কাপড় না দিলে ওযু ভেঙ্গে যাবে এ সম্পর্কিত কোন বাধ্যবাধকতা বা নিষেধাজ্ঞা নেই। এটা সম্পূর্ণ পর্দার সঙ্গে যুক্ত। ওযু করার সাথে এটা যুক্ত নয়। অজু করার সময় আপনার মাথায় কাপড় না থাকলে ওযু হবে।

তবে আপনি যদি ওযুর কোন রকুন বা সুন্নত পালন না করেন বা ছুটে যায় তাহলে ওযু ভঙ্গ হবে। ওযুর রোকন গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঠিকমত আদায় করতে হবে।

শুয়ে থাকলে কি ওযু ভেঙ্গে যায়

শুয়ে থাকলে কি ওযু ভেঙ্গে যায় এ সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে এই অংশটি পড়ুন। ওযু করার পর বা ওযু থাকা অবস্থায় আপনি যদি শুয়ে চিৎ হয়ে বা কাত হয়ে বা ঠেস দিয়ে অথবা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে আপনার ওযু ভঙ্গ হবে। অর্থাৎ বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় আপনি যদি ঘুমিয়ে যান সে ক্ষেত্রে ওযু ভঙ্গ হবে।

কারণ এতে শরীর ঢিলা হয়ে যায়, মস্তিষ্ক সহ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ফলে প্রাকৃতিক কোনো বাতকর্ম হয়ে যেতে পারে। তবে আপনি যদি না ঘুমিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকেন তাহলে এটা ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। অর্থাৎ এতে অজু ভঙ্গ হবে না।

তাছাড়া বসে বসে ঘুমালে বা সিজদায় ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হয় না।

পর পুরুষ দেখলে কি ওযু ভেঙ্গে যায়

আপনারা অনেকে পরপুরুষ দেখলে ওযু ভেঙে যায় কিনা এ সম্পর্কে জানতে চান। ওযু থাকা অবস্থায় টিভি দেখলে বা অন্য কোনভাবে পর পুরুষ বা বেগানা পুরুষ বা গায়রে মাহরাম দেখলে ওযু ভাঙ্গার এটি কারণ নয়। কারণ এটি ওজুর শর্তের মধ্যে পড়ে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করলে আপনি গুনাগার হবেন।

লজ্জাস্থান দেখলে কি ওযু ভেঙে যায়

লজ্জাস্থান দেখলে ওযু ভেঙে যায় না। ওযুর এটা কোন শর্ত নয়। তবে কাপড় ব্যতীত হাত দিয়ে লজ্জাস্থান স্পর্শ করা ওযু ভঙ্গের কারণ। আবার অনেক হাদিসে লজ্জাস্থান স্পর্শ করা ওযু ভঙ্গের কারণ নয় বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে কোন ব্যক্তি চাইলে ওযু করে নিতে পারেন।

পাদ দিলে কি ওযু ভেঙে যায়

পাদ দিলে বা বায়ু নির্গত হলে ওযু ভেঙ্গে যায় কিনা এ সম্পর্কে অনেকে জানতে চান। হ্যা, ওযু করার পর বা ওযু থাকা অবস্থায় বায়ু নির্গত হলে আপনার ওযু ভেঙ্গে যাবে। যেহেতু ওযু করার পর প্রস্রাব বা পায়খানা রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে ওযু ভঙ্গ হয়, তাই যে কোনো ভাবে আপনার শরীর থেকে (পায়খানার রাস্তা দিয়ে) বায়ু নির্গত হলে তা ওযু ভঙ্গের কারণ।

মহিলাদের-ওযু-ভঙ্গের-কারণ

মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ সতর দেখা গেলে কি অজু ভেঙ্গে যায়?

উত্তরঃ ইসলামিক চিন্তাবিদদের মতে, ওযু করার পর বা অজু থাকা অবস্থায় সতর দেখা গেলে অজু ভঙ্গ হয় না। ওযু ভঙ্গ হওয়ার কারণে মধ্যে এই শর্তটি নেই।

প্রশ্নঃ হাসি দিলে কি অজু ভেঙ্গে যায়?

উত্তরঃ কোন কোন হাদিসে উচ্চ হাসি দিলে ওযু ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আবার কোন হাদিসে আর এই ব্যাপারটিকে মওদু অর্থাৎ বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ নামাজে বা ওযুর পরে হাসি দিলে ওযু ভঙ্গ হয় না।

প্রশ্নঃ কাপড় পরিবর্তন করলে কি ওযু ভঙ্গ হয়?

উত্তরঃ বিখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ শায়খ আহমদ উল্লাহ বলেন, ওযু করার পর কাপড় পরিবর্তন করা্র জন্য ওযু ভঙ্গ হয় ন। যেমনঃ কোন কারণে লুঙ্গি, প্যান্ট বা পায়জামা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে এতে ওযু ভঙ্গ হবে না।

প্রশ্নঃ কোন তরলে ওযু ভঙ্গ হয়?

উত্তরঃ সালাত আদায় ও কোরআন তেলাওয়াতের আগে ওযু করে নেওয়া ফরজ। তবে ওযু করার পর প্রস্রাব, পায়খানা, বায়ু, মজি বীর্য অথবা রক্তপাত হলে ওযু ভঙ্গ হয়। বা সহবাসের আগে পানি বের হলে ওযু ভঙ্গ হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের কারণে রক্তপাত অথবা প্রসব পরবর্তী রক্তপাতের কারণে ওযু ভঙ্গ হয়।

প্রশ্নঃ না ঘুমিয়ে শুয়ে থাকলে কি অজু ভঙ্গ হয়?

উত্তরঃ না ঘুমিয়ে শুধুমাত্র বিছানায় শুয়ে থাকলে অজু ভঙ্গ হয় না। আপনি না ঘুমিয়ে যদি চিত হয়ে বা কাত হয়ে যেভাবেই শুয়ে থাকেন না কেন এতে অজু ভঙ্গ হবে না।

লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠক, মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ এই সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যে কোন ফরজ কাজ যেমনঃ নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত করার আগে ওযু করে পাক পবিত্র হওয়া আবশ্যক। কিন্তু কোন কোন কারনে ওযু করার পর ওযু ভঙ্গ যেতে পারে। সেই কারণগুলো আজকের আর্টিকেলে আপনারা জানতে পেরেছেন আশা করি।

এছাড়া ওযু ভঙ্গের কারণ ১৯টি সহ আরো অন্যান্য বিষয়ে আর্টিকেলে আলোচনা করেছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের ওযু ভঙ্গ হওয়ার বিষয়ে জেনে উপকৃত হয়েছেন। তবে এ সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে দ্বিধান্বিত হলে অবশ্যই একজন ইসলামিক স্কলার বা পন্ডিতের পরামর্শ নেওয়ার কথা আমরা বলে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

comment url