পাথরকুচি পাতার ২১টি উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক কি কি
আপনি কি পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক কি কি রয়েছে এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী? তাহলে ঠিক জায়গায় এসেছেন। এই প্রবন্ধে আমি পাথরকুচি পাতার ২১টি উপকারী দিক ও কি কি অপকারিতা রয়েছে এ বিষয়ে জানাবো।
মোটামুটি সবাই আমরা পাথরকুচি পাতা চিনে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো উপকারী এই পাতাটির গুনাগুন জানিনা। তবে আজকের আর্টিকেল থেকে এই পাতার উপকারী দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর আপনিও একে ব্যবহার শুরু করবেন ঘরোয়া চিকিতসার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে। পোস্ট সূচিপত্রঃ
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। বাড়িতে থাকলেও হয়তো আমরা এই পাতাটি্র উপকারিতা সম্পর্কে না জানার কারণে সঠিক উপায়ে ব্যবহার করতে পারি না। বিস্ময় সব উপকার লুকিয়ে রয়েছে এই পাতায়।
বিশেষ করে যারা শারিরীক যে কোন সমস্যায় ঘরোয়া রেমেডি ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য এই পাতাটি বলা যায় আর্শিবাদ স্বরুপ। তাই আজকের প্রবন্ধটি পড়ে এই পাতার গুনাগুন সম্পর্কে জেনে ব্যবহার শুরু করতে পারেন আপনিও।
আরো পড়ুনঃ আল্কুশি বীজ খাওয়ার ১৮টি উপকারিতা
আবার এই পাতার গুনাগুন যেমন অনেক রয়েছে তেমনি রয়েছে কিছু অপকারিতা, যা সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই সঠিক ধারণা রাখি না।
তাই এই পাতার গুনাগুন ও ক্ষতিকর দিকগুলো ভালো ভাবে জেনে যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে আর্টিকেলের মূল অংশটির আলোচনা শুরু করা যাক।
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা
আর্টিকেলের শুরুতেই জেনে নিন পাথরকুচি পাতা খেলে যে সকল উপকার পাওয়া যায় এ বিষয়ে। এই পাতা নিয়মিত খেলে নানা ধরনের রোগ ব্যাধি বিশেষ করে যারা কিডনি রোগে ভুগছেন, লিভারের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, এসিডিটির সমস্যা দূর করা সহ আরো একাধিক রোগে দারুন উপকার পাওয়া যায়। এই কারণে আদিকাল থেকে রোগ ব্যাধি ভালো করতে ঘরোয়া চিকিৎসায় পাথরকুচি পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে।
নিচে পাথরকুচি পাতার যে সকল উপকারিতা পাওয়া যায় তা বর্ণনা করা হলোঃ
গলব্লাডারের পাথর দূর করেঃ গলব্লাডারের পাথর দূর করতে দারুন কার্যকরী পাথরকুচি পাতার রস। এই সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস পান করলে অপারেশন ছাড়াই পাথর অপসারণ করা সহজ হবে। এক্ষেত্রে সকালে এবং বিকেলে দুই থেকে তিনটি পাতা চিবিয়ে এর রস খেতে খেলে উপকার মিলবে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পাথরকুচি পাতার রয়েছে বিশেষ ক্ষমতা। উচ্চ রক্তচাপ এখন তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার একটি কমন সমস্যা এই সমস্যা থেকে যেকোনো ওষুধ ছাড়া সহজে দূর করতে পারে পাথরকুচি পাতার রস। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে দূরে থাকতে নিয়মিত পাথর কুচি পাতার রস পান করুন।
কিডনি রোগ নিরাময়েঃ কিডনি রোগের মত ভয়াবহ সমস্যায় যারা আক্রান্ত তাদের জন্য দারুন উপকার বয়ে নিয়ে আসতে পারে পাথরকুচি পাতা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত তারা নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস পান করলে দ্রুত সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। কিডনির পাথর সরাতে নিয়মিত দুই বেলা পাথরকুচি পাতার রস খেলে উপকার মিলবে।
এসিডিটি সমস্যা দূর করেঃ আমাদের প্রতিদিনকার অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের জন্য এসিডিটির সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। এসিডিটির কারণে দেখা দেয় শারীরিক আরো নানা ধরনের সমস্যা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং সুস্থ জীবন যাপনের জন্য নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস পান করলে উপকার পাবেন। কারণ পাথরকুচি পাতার রস পেটের ভিতরে গিয়ে এসিডিটি কমাতে সহায়তা করে।
লিভারের প্রদাহ কমায়ঃ কিডনি উচ্চ রক্তচাপ গলব্লাডারের পাথর দূর করার সাথে সাথে পাথরকুচি পাতার আরেকটি উপকারী কাজ হল লিভারের প্রদাহ কমিয়ে লিভার সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখা। লিভার বা জন্ডিস রোগে আরাম পেতে নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস নিয়ম মেনে পান করুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ ডায়াবেটিস এর মত বর্তমান সময়ের মহামারী এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত পাথরকুচি পাতা সেবন করতে পারেন। পাথরকুচি পাতা ডায়াবেটিস রোগীরা খাওয়ার ফলে ভালো ফলাফল পেয়েছেন। এক্ষেত্রে সকালে খালি পেটে দুই তিনটি পাতা ভালোভাবে ধুয়ে চিবিয়ে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ইনসুলিনের মাত্রা সঠিক রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ পাথরকুচি পাতা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দারুন কার্যকরী। ভেষজ এই পাতাটি সকালে চিনি দিয়ে বা মধুর সাথে পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে যারা প্রায়ই সর্দি কাশিতে ভোগেন তারা নিয়মিত এই পাতার রস সেবন করলে উপকার পাবেন। এছাড়া চাঁদের পুরনো সর্দি রয়েছে তারা পাথরকুচি পাতার রস হালকা গরম করে মধু দিয়ে সকাল এবং বিকেলে খেলে পুরাতন কাশি ভালো হবে।
হজম প্রক্রিয়া সহজ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ পাথরকুচি পাতা আমাদের হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করে তুলতে সহায়তা করে। যারা হজমের সমস্যায় ভুগছেন এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো কষ্টদায়ক সমস্যা নিত্যদলের সঙ্গী তারা নিয়মিত পাথরকুচি পাতা খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য শরীরে প্রদাহ কমায়ঃ পাথরকুচি পাতায় রয়েছে ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য। তাই নিয়মিত পাথরকুচি পাতা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের যেকোনো সংক্রমণজনিত প্রদাহ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
শরীরের জ্বালাপোড়া কমায়ঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন বিশেষ করে পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিরা অনেক সময় শরীরের জ্বালাপোড়া ভোগেন। আবার অনেকের অন্য কোন রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরে জ্বালাপোড়া হতে দেখা যায়। শরীরের এই জ্বালাপোড়া দূর করে আরাম দিবে পাথরকুচি পাতার রস। তাই নিয়ম মেনে প্রতিদিন এই পাতার রস সকালে পান করুন।
কাটা ও ক্ষত সারাতে পাথরকুচি পাতাঃ শরীরের যেকোনো ধরনের কাটা ও ক্ষত সারাতে পাথরকুচি পাতার রয়েছে বিশেষ গুণ। যে কোন ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলতে পাথরকুচি পাতা হালকা গরম করে ক্ষতস্থানে লাগালে ব্যথার উপশম হবে।
ব্রণ ভালো করতে পাথরকুচি পাতাঃ যারা নিয়মিত ব্রণের সমস্যায় ভুগেন এবং কোনভাবেই ব্রণ ভালো হতে চায় না তারা পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। সক্রিয় ব্রণ ও ব্রণের ক্ষত ভালো করতে পাথরকুচির পাতায় রয়েছে বিশেষ উপাদান। এছাড়া পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমানে পানি থাকায় ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব দূর করে এবং ত্বক আদ্র রাখতেও সহায়তা করে।
বিষাক্ত পোকামাকড় কামড়ালেঃ অনেক সময় দেখা যায় বিষাক্ত পোকা কামড়ের কারণে শরীরে ক্ষত তৈরি হতে পারে, জ্বালাপোড়া হতে পারে অনেক সময় রক্তপাত হতেও দেখা যায়। এই সময় তাজা পাথরকুচি পাতার রস হালকা গরম করে লাগালে তৎক্ষণাৎ ক্ষতস্থানে দ্রুত আরাম মিলবে।
পেটের সমস্যা দূর করতেঃ আপনি যদি পেটের সমস্যায় ভুগেন তাহলে নিয়মিত পান করুন পাথরকুচি পাতার রস। পাথরকুচি পাতার রস পান করা ছাড়াও পাথরকুচি পাতা হালকা লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। খেতে আপনার পেটের সমস্যা অনেকটাই দূর হবে আশা করি।
মৃগী রোগ ভালো করতেঃ মৃগী রোগ ( Epilepsy) ভালো করতে প্রাচীনকাল থেকে ব্যাবহার হয়ে আসছে পাথরকুচি পাতা। মৃগী রোগের রোগী খিঁচুনি দেখা দিলে সাথে সাথে কয়েক ফোঁটা পাথরকুচি পাতার রস মুখে দিলে পেটে যাওয়ার মাধ্যমে এই রোগের তৎক্ষণাৎ আরাম পাবে।
শিশুর পেট ফাঁপা দূর করতেঃ প্রায়ই শিশুদের নানা কারণে পেট ফাঁপা মত সমস্যা দেখা দেয়। শিশুদের পেট ফাঁপা একটি সাধারণ সমস্যা। শিশুর পেট ফাঁপা দূর করতে পাথরকুচি পাতার রস চিনির সাথে মিশিয়ে এক চা চামচ খাওয়ালে পেট ফাঁপা দূর হবে। তাছাড়া কয়েক ফোটা পাথরকুচি পাতার রস শিশুর পেটে মালিশ করলেও পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দূর হবে।
প্রস্রাবের সমস্যা দূর করতেঃ নানা কারণে অনেকে প্রস্রাবের সমস্যা হতে দেখা দিতে পারে। পানি কম খাওয়া বা কিডনি সংক্রান্ত রোগের কারণে অনেক সময় প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সহ ইনফেকশন হতে পারে। এই সমস্যা দূর করতে পাথরকুচি পাতার রস খেলে প্রস্রাবের যেকোনো ধরনের সমস্যা থেকে উপকার মিলবে।
পাইলস ও অর্শ রোগ সারিয়ে তুলতেঃ পাইলস ও অর্শ রোগের মত যন্ত্রণাময় রোগ হতে নিরাময় পেতে নিয়মিত সকালে পান করতে পারেন গোলমরিচের সাথে পাথরকুচি পাতার রস। দুই থেকে তিন চা চামচ পাথরকুচি পাতার রস খালি অথবা চিনি বা মধুসহ পান করলে এই রোগের উপশম হবে।
রক্তশূন্যতা দূর করেঃ পাথরকুচি পাতায় রয়েছে আয়রন। তাই যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন নিয়মিত দুই বেলা পাথরকুচি পাতার রস পান করলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করবে। এর ফলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।
এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাল উপাদানঃ পাথরকুচি পাতায় এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাল উপাদান থাকায় আমাদের শরীরে যেকোনো ধরনের সংক্রমণজনিত দারুন কাজ করে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস এর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক
আর্টিকেলের এই পর্যায়ে জেনে নিন পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। প্রিয় পাঠক, পাথরকুচি পাতার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকর বা অপকারিতাও লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে, যে কোন কিছু অতিরিক্ত গ্রহণ করার ফলে তা উপকারের বদলে অনেক সময় ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসে এটা আমরা সবাই জানি, পাথরকুচি পাতাও এর ব্যতিক্রম নয়।
নিচে দেখে নিন পাথরকুচি পাতার বেশ কয়েকটি ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেঃ
পেটের বিভিন্ন সমস্যাঃ পাথরকুচি পাতা নিয়ম মত পরিমাণ মতো গ্রহণের ফলে এসিডিটি সমস্যা অনেকটাই দূর হয়। তবে পাথরকুচি পাতা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে পেটে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন- পেট ফাঁপা, এসিডিটি তৈরি হওয়া ইত্যাদি।
ডায়রিয়াঃ পাথরকুচি পাতা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে পেট ফাঁপা ও এসিডিটির মতো সমস্যা তৈরি হওয়ার সাথে সাথে অনেক সময় ডায়রিয়ার মত সমস্যা তৈরি হতে দেখা গিয়েছে। তাই এই পাতার রস সেবনের সময় অবশ্যই সঠিক পরিমাণ রাখতে হবে।
মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়াঃ অনেক সময় অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতা খেলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এর ফলে আপনি স্বাদ হীনতায় ভুগতে পারেন। তাই এই পাতার রস অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ক্ষুধা মন্দাঃ পাথরকুচি পাতা অতিরিক্ত গ্রহণ করার ফলে আরেকটি ক্ষতিকর দিক হলো ক্ষুধা মন্দ তৈরি হওয়া। অনেকের মাঝে এই সমস্যা দেখা গিয়েছে যে অতিরিক্ত এই পাতার রস পান করার ফলে ক্ষুধা মন্দার মত সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাই যে কোন চিকিৎসায় পরিমাণ মতো এই পাতার রস সেবন করুন।
পিত্তথলির সমস্যাঃ পাথরকুচি পাতার আরেকটি ক্ষতিকর দিক হলো অতিরিক্ত এই পাতার রস পান করলে অনেক সময় পিত্তথলির মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। পাথরকুচি পাতা যেমন পরিমাণ ও সঠিক নিয়মে গ্রহণের ফলে পিত্তথলির পাথর দূর হয় তেমনি, অনেক সময় অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে পাথর তৈরি হওয়ার মত সমস্যা দেখা দিয়েছে।
গর্ভবতীর মহিলাদের জন্য ঝুকিঃ গর্ভাবস্থায় একজন নারীর অত্যন্ত সংবেদনশীল সময়। এই সময় যে কোন খাবার গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা হয়ে থাকে। পাথরকুচি পাতার নানা উপকার থাকলেও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এই পাতা খাওয়ার নিষেধ রয়েছে।
হার্টের সমস্যাঃ অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতা বা পাতার রস খেলে হার্টের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যে হার্টের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য অবশ্যই নিয়মমাফিক এই পাতা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দ্রুত ভালো হওয়ার আশায় কোনভাবেই অতিরিক্ত রস পান করা যাবে না।
এলার্জি সমস্যাঃ যারা এলার্জির সমস্যায় ভুগছেন, যে কোন কিছু খেলে শরীরে চুলকানি, ফুলে যাওয়া র্যাশ ওঠা, লাল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা রয়েছে তাদের এই পাতার রস গ্রহণে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। এই পাতার রস খাওয়ার পর যদি এই ধরনের কোন অ্যালার্জিজনিত সমস্যা তৈরি হয় তাহলে অবশ্যই সাথে সাথে খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পাথরকুচি পাতা কি ও ঔষধি গুনাগুন
পাথরকুচি পাতা এক ধরনের গুল্ম জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ যা আমাদের বাড়ির আশেপাশে, রাস্তার ধারে জন্মাতে দেখা যায়। অনেকে পাথরকুচি পাতা বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বারান্দার টবে বা ছাদে লাগিয়ে থাকেন। অন্যান্য গাছের পাতার চেয়ে পাথরকুচি গাছের পাতা অনেক পুরু ও মাংসল।
এই পাতার আকৃতি ডিম্বাকৃতি ও মসৃণ হয়ে থাকে এবং পাতার রং সবুজ। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এই পাতার কিনার বা ধার থেকে অন্য চারা বের হয়ে থাকে। এবং এই গাছ হওয়ার জন্য কোনরকম বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় না। পাথরকুচি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম kalanchoe pinnate. এছাড়া পাথরকুচি পাতা মিরাকল লিফ নামেও পরিচিত।
পাথরকুচি পাতার ঔষধি গুনাগুনের জন্য ভেষজ উপাদান হিসেবে ঘরোয়া ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই পাতায় নানা ধরনের রোগ ব্যাধি ও সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য নানা ধরনের ঔষধি গুনাগুন রয়েছে।
এই পাতার রস গ্রহণের ফলে কিডনির পাথর দূর হয়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, লিভার ভালো থা্কে, শরীরের ভিতরে প্রদাহ কমায়, হজম প্রক্রিয়া ভালো হয় ও পেটের সমস্যা দূর হয়। এছাড়া রোগ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সর্দি-কাশি জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া চুল ও ত্বকের যত্নেও এই পাতায় রয়েছে বিশেষ গুনাগুন।
পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা আমরা তখনই পাবো যখন উপকারী এই পাতাটির খাওয়ার নিয়ম মেনে চলবো। কোন জিনিস যত উপকারী হোক না কেন তা যদি নিয়ম মাফিক না খাওয়া হয়, তাহলে এর যথাযথ উপকার পাওয়া যায় না বা অনেক সময় ক্ষতি হতে দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ আল্কুশি পাউডার এর ১০টি উপকারিতা
তাই পাথরকুচি পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানা থাকা জরুরী। পাথরকুচি পাতা বা পাতার রস খাওয়ার নিয়ম নিচে দেখে নিন-
- সকালে খালি পেটে পাতার রস বের করে পানি মিশিয়ে পান করতে পারেন।
- অনেক রোগের ক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রসের সাথে হালকা গরম পানি মিশিয়ে খেলে সুফল পাওয়া যায়।
- পাথরকুচি পাতার সাথে চিনি বা মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
- অনেক সময় ২ থেকে ৩টি পাথরকুচি পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতেও সমান উপকার পাওয়া যাবে।
- পাথরকুচি পাতা সেদ্ধ করে চায়ের মতো করে খেতে পারেন। বা চা বানানোর পর পাথরকুচি পাতা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তারপর চা পান করতে পারেন।
- অনেকে পাথরকুচি পাতা ভাজিতে বা তরকারিতে দিয়ে খেতে পছন্দ করেন। এটি স্বাদ বাড়ানোর সাথে সাথে সুস্বাস্থ্যকরও বটে।
- যে কোন রোগের চিকিৎসায় এই পাতার রস সাধারণত এক থেকে দুই চা চামচ পরিমাণ খাওয়ার উত্তম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর চেয়ে বেশি একেবারে পান না করাই ভালো। তবে যে কোন চিকিৎসায় এই পাতা বা পাতার রস গ্রহণের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়
খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে পাওয়া যায় অনেক উপকার। সাধারণত যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে এই পাতার রস সকালে খালি পেটে খাওয়ার কথা বলা হয়ে থাকে। এতে ওই রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
কোন কিছু খাওয়ার পর বা ভর পেট খাওয়ার পর পাথরকুচি পাতার রস না খেয়ে খালি পেটে পাথরকুচি পাতার রস দৈনিক খেলে আপনি যে রোগের জন্য পান করছেন তা নিরাময় হবে ইনশাল্লাহ।
নিচে দেখে নিন পাথরকুচি পাতা খালি পেটে খেলে কি হয় এ বিষয়ে-
- সকালে খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে পিত্তথলির পাথর দূর করতে সহায়তা করে
- সকালে খালি পেটে পাথরকুচি পাতার রস খেলে(চিনি ছাড়া) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- সকালে খালি পেটে পাথরকুচি পাতার রস খেলে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা দূর হয়।
- লিভার সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা দূর করতে সকালে খালি পেটে পাথরকুচি পাতার রস খেতে বলা হয়ে থাকে।
- পেট ফাঁপা বা এসিডিটির মতো সমস্যা দূর করতে পাথরকুচি পাতার রস সকালে খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- প্রস্রাব সহ শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করতে সকালে খালি পেটে পাথরকুচি পাতার রস খেলে আরাম মিলবে।
পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয়
চুলের যত্নে পাথরকুচি পাতার ব্যবহার
পাথরকুচি পাতা শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় যেমন কার্যকরী তেমনি চুলের যত্নেও অত্যন্ত উপকারী। চুলের নানা সমস্যা সমাধানে নিয়মিত পাথরকুচি পাতা ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়। যারা চুল পড়া সমস্যায় ভুগছেন, চুলে খুশকি দূর করতে চান এবং চুলের ত্বক হেলদি করে চুলের গোড়া মজবুত করতে চান তারা পাথরকুচি পাতা নিয়মিত ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
এক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস বের করে মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। অনেকে আবার পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পাতার পেস্ট বানিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে থাকেন।
পাথরকুচি পাতা বা পাতার রস চুলের গোড়ায় লাগানোর পর ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত কিছুদিন ব্যবহারে এতে করে চুলের গোড়া মজবুত ও শক্ত হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে। এছাড়া চুলের খুশকির জন্য কারণ ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক আক্রমণ রোধ করে। এর ফলে চুল থেকে খুশকি দূর হয়।
এমনকি যারা বয়স হওয়ার আগেই চুল সাদা হওয়ার সমস্যায় ভুগছেন তারাও এটি নিয়মিত ব্যবহারে চুলের এই প্রকাল পাকা রোধে সহায়তা করবে।
লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক, পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। আজকের আর্টিকেলে আপনারা এই পাতার ২১ টি উপকারী দিক সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, যা ঘরোয়া চিকিৎসার উপাদান হিসেবে অত্যন্ত কার্যকরী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এছাড়া উপকারি এই পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন।
আপনি যদি উপরে উল্লেখিত শারীরিক যে কোন সমস্যার জন্য চিকিৎসার অংশ হিসেবে উপকারী এই পাতাটি নিয়ম মেনে গ্রহণ করেন তাহলে আপনি ওই রোগ থেকে নিরাময় হবেন ইনশাল্লাহ।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url